সিংগাইরে সক্রিয় খাবারে চেতনানাশক মেশানো অজ্ঞান পার্টি

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে অচেতন করে লুটপাট করা অজ্ঞানপার্টি। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ৪ পরিবারে খাবারের সাথে চেতনা নাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে মৃত্যুসহ লুটের ঘটনা ঘটেছে। কোন অভিযোগ না থাকায় চক্রটি রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।

ভুক্তভোগী পরিবার থেকে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, মোসলেমাবাদ গ্রামের ইঞ্জিঃ মোজাম্মেল হোসেনের পরিবারের ৯ সদস্য রাতের খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। পরদিন গৃহকর্তা কাজী মকবুল হোসেন(৯০) এর বড় ছেলের স্ত্রী রহিমা খাতুন নাতনি অনন্যাকে(১৩) আনতে গেলে সবাইকে ঘরের মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। তার ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে কাজী মকবুল হোসেন ও মেয়ে সেলিনা হকের(৫৫) অবস্থার অবনতি হলে ঢাকাস্থ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১০ সেপ্টেম্বর সেলিনা হকের অবস্থার আরো অবনতি হলে অন্য হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা জান। পরিবারের অন্য সদস্যরা সুস্থ্য হয়েছেন। তবে তাদের বাসার কিছু খোয়া যায়নি এবং কোন মামলাও করেনি ওই পরিবার।
এ রেশ কাটতে না কাটতেই, গত ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের আলী নগর গ্রামের দুই পরিবারের ১৩ সদস্যকে খাবারের সাথে চেতনা নাশক খাওয়ানো হয়।

জানা যায়, ওইদিন দুপুরের খাবার খেয়ে আলী নগর গ্রামের সামছুদ্দিন ডিলারের(৭৮) পরিবারের ৭ সদস্য ও প্রতিবেশী ছকিল উদ্দিনের(৮০) পরিবারের ৬ সদস্য অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাতে সামছুদ্দিন ডিলারের বাড়ি থেকে নগদ ২ লক্ষ টাকা লুটে নেয় চক্রটি। অপরদিকে ছকিলের ভাই পরিবারের অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে রাতে পাহারা দিয়ে মালামাল লুট হওয়া থেকে রেহাই পান। অজ্ঞান হওয়া সকলেই সুস্থ্য হয়েছেন।

সম্প্রতি ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ওয়াইজনগর গ্রামের মৃত. মো. ইসমাইল হোসেনের পুত্র মোঃ মামুনুর রশিদ(৫৫)সহ পরিবারের ৪ সদস্য দুপুরের খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। অজ্ঞান হওয়া সদস্যরা হচ্ছেন- মোঃ মামুনুর রশিদ(৫৫), তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার(৪০), কন্যা মনিরা(১৫) ও পুত্র আব্দুল্লাহ(৭)। এরা সকলেই সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানা গেছে, ওই পরিবারের সকল সদস্য এক সাথে দুপুরের খাবার খান। গৃহকর্তার ছেলে আব্দুল্লাহ খাবারের পর সহপাঠিদের সাথে বাড়ির অদূরে খেলার এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। প্রতিবেশিরা তাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ওই বাড়ির অন্যদেরকেও অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ হয়েছে কিনা জানা যায়নি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহকর্তার মেয়ে মনিরা বলেন, রান্না ঘরের মসলাগুলো এলোমেলো ছিল। হয়তো ওই মসলাতে কিছু মেশানো হয়ে থাকতে পারে।

চক্রটিকে এখনো সনাক্ত না করতে পারায় সাধারণ জনগণ রয়েছে উৎকন্ঠায় ও প্রাণ সংশয়ে। ওই চক্রটিকে দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেফতারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান এলাকাবাসি।

এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর