প্রতিদিন ১০ হাজার লোকের ইফতার মাহফিল নলতা শরীফে

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: হজরত শাহছুফী আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লা (রহঃ)-এর নলতা ‘পাক রওজা শরীফ’ প্রাঙ্গণে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম ইফতার মাহফিল আয়োজিত হয় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে। দিন দিন এ ইফতার মাহফিলের পরিধি আরও বাড়ছে।

প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার রোজাদারের জন্য এখানে ইফতার প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে ৬ থেকে ৭ হাজার এবং বিভিন্ন মসজিদ, আহছানিয়া মিশন ও মহল্লায় ৩ হাজার ইফতারির প্লেট সরবরাহ করা হচ্ছে।

ফকির, মিসকিন, গরীব, ধনী সবাই ভেদাভেদ ভুলে প্রতিদিনই এ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। সওয়াব হাসিলের জন্য দূরদূরান্ত থেকেও ইফতারের উদ্দেশ্যে রোজাদাররা ছুটে আসেন ‘পাক রওজা শরীফ’ প্রাঙ্গণে।
হজরত শাহছুফী খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহঃ) তাঁর জীবদ্দশায় মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর পরও আহছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ এ ইফতার মাহফিল অব্যাহত রেখেছে। নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের ব্যবস্থাপনা ও নলতা শরীফের খাদেম আলহাজ আনছার উদ্দিন আহমদ-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এই ইফতার মাহফিলের পরিধি বেড়ে এখন ১০ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে রওজা শরীফ প্রাঙ্গণেই এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। রোজার শুরু থেকে প্রতিদিন সেখানে ইফতার করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইফতারের জন্য ছুটে আসেন। বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইফতারি বিলিবন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে ৪ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
এখানে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, ছোলা, সিংগাড়া, ফিরনি, চিড়া, কলা ও ডিম। এতো মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরও জেলার বিভিন্ন মসজিদে একবার করে ইফতারি পৌঁছে দেয়া হয়।

ছোলা, ডিম ও ফিরনির বাবুর্চি বাবু বলেন, “প্রতিদিন ৮০০ কেজি দুধ দিয়ে ফিরনি রান্না করা হয়। সিদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। প্রতি বছরই আমি এখানে রান্নার কাজ করে থাকি।” সিঙ্গাড়ার বাবুর্চি মোক্তার হোসেন বলেন, “আমি এখানে ৩৩ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বানাই। ১৫ থেকে ২০ জন একত্রে কাজ করি। আসরের নামাজের আগেই সিঙ্গাড়া প্রস্তুত শেষ করে ফেলি।”

স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, “আমরা প্রতিদিন ৪টি গ্রুপে ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক এখানে কাজ করি। সবাই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বন্টনের কাজ শুরু করি। আমরা চেষ্টা করি যাতে আগত রোজাদারের কোনো অসুবিধা না হয়।” ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইফতারে অংশ নিতে আসা সাতক্ষীরার সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের মৃত শেখ আজাদ হোসেনের ছেলে শেখ আলমগীর হোসেন বলেন, “শুনেছি এখানে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করেন। তাই আমিও আজ অংশগ্রহণ করতে এসেছি। অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এখানে আসেন।”

শুধু তাই নয়, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদে এতেকাফে বসেন ৫৫০ থেকে ৬০০ মুসল্লি। যাদের খাওয়া-দাওয়া ও ইফতারের ব্যবস্থাও এখানে করা হয়। নলতা মসজিদে প্রতিদিন তারাবিতে অংশ নেন দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লি। রয়েছে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের নামাজের আলাদা ব্যবস্থা।
রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে ইফতারসহ সবকিছুরই ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ।

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের ট্রেজারার মোঃ ইউনুস ও হিসাবরক্ষক এবাদুল হক জানান, প্রতিবছর রমজানে ইফতার, তারাবি ও ইতেকাফ উপলক্ষে নলতা রওজা শরীফে মুসল্লিদের মিলনমেলা বসে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য শফিকুল আনোয়ার রনজু বলেন, “ইফতার মাহফিলের পরিধি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। নতুন মসজিদটা নির্মাণ হয়ে গেলে সেখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার স্থান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে টিন ও বাঁশ দিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এখানকার সব কর্মকর্তার ইচ্ছা কেউ যেন খালি মুখে ফিরে না যান। কেউ যেন কষ্ট না পান। এটিই আমাদের মুর্শিদ মাওলা হজরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (রহঃ)-এর চাওয়া।”

নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের সহ-সম্পাদক চৌধুরী আমজাদ হোসেন বলেন, “প্রতিদিন ১০ হাজার ইফতার প্রস্তুত করা হয় রোজাদারের জন্য। কারও কোনো সমস্যা হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে পারেননি। যতদূর জানি, এটিই বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম ইফতার মাহফিল।”
ইফতারের আগে প্রতিদিন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দেশ ও জাতীর কল্যাণে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর