ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নজর নেই কতৃপক্ষের, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা। কারখানাটির ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নজর নেই কতৃপক্ষের। ড্রেন গুলো ময়লা আর্বজনায় ভরে ও সার যত্রতত্রভাবে ফেলে রাখায় বৃষ্টিতে সে গুলো পঁচে ও অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য ড্রেন দিয়ে নিদিষ্ট স্থানে না গিয়ে আশে পাশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষের পুকুর, ফসলি জমি ও বাড়ী ঘরে প্রবেশ করেছে এই বিষাক্ত পানি।

বর্জ্যের দুষিত পানির কারণে মরছে পুকুর ও বিলের মাছ, খামারের হাঁস-মুরগী, নষ্ট হচ্ছে ফসল, মরছে গাছ-পালা। এদিকে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় চরম ঝুঁকিতে ওই এলাকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সারকারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তারা।

ছবি: বার্তা বাজার।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দৈনিক এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম যমুনা সার কারখানা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও অ্যামোনিয়া গ্যাস সরাসরি বাতাস, মাটি ও পানিতে ছাড়া হয়। এতে কারখানার পার্শ্ববর্তী বিল ও পুকুরগুলোতে মাছ প্রায়ই গণহারে মারা য়ায়। এছাড়া জমির ফসল ও গাছপালা ক্ষয়ক্ষতিসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে।

এদিকে কারখানার বাফার গুদামের হাজার হাজার মেট্রিক টন সার নির্ধারিত গুদামে সংরক্ষণ না করে খোলা আকাশের নিচে জমা করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে এবং তা বিভিন্ন বিলে ও পুকুরের পানিতে মিশে সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিকার করছে না। কারখানার অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য ড্রেন দিয়ে নিদিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে উল্টো।

ছবি: বার্তা বাজার।

নব নির্মিত ড্রেন গুলোতে ময়লা আবর্জনা ও মাটি পড়ে ভরার কারনে কারখানার আশে পাশের বিভিন্ন পুকুর, বাড়ী-ঘড় এমনকি সরিষাবাড়ী-তারাকান্দী-ভুয়াপুর প্রধান সড়কের উপর দিয়ে বইছে এই বিষাক্ত ও দুষিত পানি। প্রতি বছরই কান্দার পাড়া, পাখিমারা, ঢুরিয়ার ভিটা, চেচিয়াবাধা সহ একাধিক গ্রামের বিভিন্ন মৎসচাষ প্রকল্পের মাছ মরে ও ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে এ এলাকার কৃষক ও মৎস চাষিদের। এ নিয়ে কারখানা কতৃপক্ষের কাছে বার বার সহায়তা চেয়ে আবেদন করেও কোনো সহায়তা পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা।

চরপাড়া গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, আমার ৩ বিঘা ফসলি জমিতে আমি চাষ করতে পারি না। সার কারখানার পচা পানি কালভাট দিয়ে আমার জমিতে এসে পড়ে। ফলে ঐই জমি কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। শরীরে ওই পানি লাগলেই লালচে দাগ দেখা দেয়, জ্বালাপোড়া করে ও ঘা হয়ে যায়।

কান্দারপাড়া গ্রামের মাছ চাষি মতিয়র রহমান বলেন, আমার ২ বিঘা জমিতে পুকুর করে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ কয়েক মাস পূর্বে ছেড়েছিলাম। মাছগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সারকারখানার বর্জ্যের পানি পুকুরে আসার কারনে প্রায় সব মাছ মরে গেছে। প্রতিদিনই মাছ মরে ভেসে উঠছে। সার কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপুরন চেয়ে বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।

তিতাস মোড়ের পারুল বেগম বলেন, আমি গরীব মানুষ, আগে বিভিন্ন স্থান থেকে শাক তুলে খেতাম কিন্তু এখন সেটাও পারি না। কোথাও কোন শাক নেই সব মরে গেছে। এই কারখানার বিষাক্ত পানির কারনে আমাদের মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কোন পুকুর বিলে মাছ নেই সব মরে যায়। পানি শরীরে লাগলে সেখানে ঘা হয়ে যায়। সব গাছপালা মরে যায়।

এ বিষয়ে যমুনা সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদিপ মজুমদার বলেন, এই বর্জ্য সংরক্ষনের জন্য ৩ একর জমি অধিগ্রহনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরনের বিষয়ে উর্দ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর