‘ভয়কে জয় করে ভালো থাকি সবাই মিলে’

করোনাভাইরাস সংক্রমনকে ভয় না করে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে ভয়কে জয় করেই সকল সাভারবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া সম্ভব বলে জানালেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সদ্য করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পজিটিভ থেকে নিরাময় হয়ে প্রথম কার্যদিবসে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

ডা. সায়েমুল হুদা সাভারবাসীর উদ্দেশ্যে জানান, আপনার সুস্বাস্থ্য ও আপনার জীবন আপনার, আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীদের প্রতি খেয়াল রাখা আপনার, আমার ও আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন ভয়কে জয় করে ভাল থাকি সবাই মিলে।

কোভিড-১৯ নিয়ে ডা. সায়েমুল হুদা আরও বলেন, যতদিন ভ্যাকসিন না পাওয়া যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমরা বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করবো। এসবের ভিতর ঘর থেকে অবশ্যই বের হতে হবে মাস্ক পরিধান করে, সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবো এবং ভয় না পেয়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। এসব সতর্কতা মেনে চলা খুব কঠিন নয় বলেও জানান তিনি।

রিনি বলেন, আমি আমার দপ্তরের সবাইকে বলে দিয়েছি, মাস্ক বিহীন কেউ কর্মস্থলে অাসবেন না। আমার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন বরাবর এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন।

সকল দপ্তর প্রধান নির্দেশনা দিয়ে দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে উল্লেখ করে ডা. সায়েমুল হুদা জানান, সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি এমন নির্দেশনা দিয়ে দেয়, ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রসঙ্গত, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করোনাকালীন সময়ে এবং বর্তমান সময়ে যে পদক্ষেপ গ্রহন করেছে তাতে প্রায় সত্তর লক্ষাধিক সাভারবাসী করোনা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই উপজেলায় সংক্রমণের ও মৃত্যুর হার খুবই কম।

এব্যাপারে ডা. সায়েমুল হুদা জানান, কোভিড-১৯, আসন্ন ডেঙ্গু এবং বন্যাসহ বিভিন্ন দূর্যোগ মোকাবিলায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রম মাননীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব সহ সকল ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিকবৃন্দ, পল্লী চিকিৎসক সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

করোনা প্রতিরোধে ও এসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে ডা. সায়েমুল হ্যদা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাপ্ত ২টি এম্বুলেন্সের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সেবা প্রদান, অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনার নমূনা সংগ্রহ, উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ২৫০০ জন পল্লী চিকিৎসক সহ মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনদের প্রশিক্ষণ প্রদান, করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও সৎকারের জন্য প্রায় ২০০ জন তরুন ও আলেম-ওলামাদের নিয়ে টিম গঠন, করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে পোশাক কারখানা চালু রাখা এবং পোশাক শ্রমিকের সুরক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মালিকপক্ষেত সাথে আলোচনার দ্বারা ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত গ্রহন, সাভার উপজেলাকরোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও বিভিন্ন প্রকারের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রাখা, করোনা মহামারির শুরু হতে অদ্যাবধি কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবায় সকল প্রকার ছুটি বিহীন সরকারি পরিপত্র মোতাবেক সকল পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের রোস্টার মেনে নিরবচ্ছিন্ন সেবা কার্যক্রম চলমান রাখা, এই মহামারী চলাকালীন সময়ে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্য শিক্ষা, করোনা সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান রয়েছে।

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। মোটকথা, করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবাকে ব্যাহত হয়নি।

ডেঙ্গু মহামারি আকারে যাতে রুপ লাভ না করতে পারে সে বিষয়ে ডা. সায়েমুল হুদা জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। কোথাও জমা পানি যাতে না থাকে সেজন্য সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনদিনের জমানী পানি ফেলে দিতে হবে এবং কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সকলের সতর্ক থাকতে হবে।

সম্প্রতি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারাদেশের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ভিতরে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে এবিষয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, এই অর্জন অনুপ্রেরণামূলক। আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্ম বীরদের প্রতি।

এছাড়া অনুপ্রেরণা ও বিশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান, মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সিভিল সার্জন ডাঃ আবু হোসেন মোঃ মঈনুল আহসান সহ সকল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ও সাভার উপজেলা বাসীর প্রতি।

তবে এতকিছুর পরেও সরেজমিন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে কিছু অপ্রতূলতা এই প্রতিবেদকের নজরে আসে। এগুলোর সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করলে সাভারের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা সাভারবাসী আরো বেশী উপকৃত হতে পারবে।

এসবের ভিতর রয়েছে, সাভার উপজেলার জনসংখ্যা বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৯৯ শয্যায় উন্নীত করা সহ জনবল বৃদ্ধিকরণ খুব জরুরী। পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট দূরীকরণে নতুন ও আধুনিক ভবন নির্মাণও জরুরী।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর