৭২ হাজার টাকায় ধর্ষিতার সম্ভ্রমের মূল্যায়ন, অপমানে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধর্ষণের বিচার হিসাবে ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে আসিফা খাতুন নামের ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল (শুক্রবার) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার দ্বারিয়াপুর মহাজনপাড়া মহল্লায় এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, কয়েকদিন আগে একই এলাকার তহিদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল বাসির চাচাতো বোন আসিফার ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় আসিফার চিৎকারে তার মা ঘরের দরজা আটকে দেয় এবং আটক থাকা অবস্থায় ধর্ষক বাসিরের বাবা তহিদুল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

এরপর পরে গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়ার উদ্যোগে তার নিজ বাড়িতে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশে বসেন। সেখানে ধর্ষক আব্দুল বাসিরের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশে ধর্ষক বাসিরকে ৭২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু ধর্ষণের পর অভিযুক্তের সাথে তার বিয়ে না দিয়ে ৭২ হাজার টাকায় রফাদফা করার অপচেষ্টা মেনে নিতে পারেনি আসিফা।

যার জেরে পরদিন (শুক্রবার) সকালে সে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিবারের লোকজন তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় হাসপাতালেই মারা যায় আসিফা।

এ বিষয়ে আসিফার বড় বোন বলেন, ৭২ হাজার টাকায় ধর্ষণের সমাধান মানতে না পেরে সালিশেই আসিফা সাফ জানিয়ে দেয় এ বিচার মানিন এবং আসিফা সকলের উপস্থিতিতে বলে, আমাকে বাসির ধর্ষণ করেছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো, টাকা নিবো না।

আবার আসিফার ভাবি জানান, ৭২ হাজার টাকায় সমাধান হলেও কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়া আমাদের পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকিটা মটন মিয়া নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মটন মিয়ার সাক্ষাৎ পাওয়া গেলেও তিনি এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, পরিবারের পক্ষ হতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তাবাজার/এসজে