প্রাথমিকে প্রথম-পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত থাকছে না পরীক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে কোনো ধরনের পরীক্ষা থাকছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই তিন শ্রেণীতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল থেকে দেয়া ডায়েরির রিপোর্টই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। পরীক্ষার চাপ যেন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হতে না পারে, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করারও চিন্তাভাবনা চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয় না।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীর সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষাব্যবস্থা সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর করার চিন্তা করা হচ্ছে।

এছাড়া আগামী বছর থেকে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে বর্ধিত করে দুই বছর মেয়াদ করার চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে স্কুলকে আকর্ষণীয় করতে প্রতিটি স্কুলে ‘কাব স্কাউট’ গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকে পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলব, কোনোমতেই যেন কোমলমতি শিশুকে কোনো অতিরিক্ত চাপ না দেয়া হয়। তা হলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা আলাদা শক্তি পাবে। আর তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে।

কোমলমতি বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে তিনি ‘একধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে বলেন, শিশু প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি-খেলার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করবে। তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শিশুর পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছরের আগে শিশুকে স্কুলে পাঠায় না।

আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে, খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুর মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি।

তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সবাই সবকিছু একরকম করায়াত্ত করতে পারবে না। যার যেটি যেভাবে সহজাতভাবে আসবে, তাকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া, যেন শিক্ষাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণশিক্ষা সচিবকে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।

ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইসব দেশে বাচ্চাদের কোনো পরীক্ষা নেই। তারা কীভাবে শিশুর মেধার মূল্যায়ন করে, সেসব বিষয় খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে কমিটি গঠন করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্লাসের পরীক্ষা যেন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য কোনো ধরনের বাধা হতে না পারে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর