আখ চাষ করে লাভবান হলেন কৃষক নজরুল

উন্নত জাতের আখ চাষ। খরচ কম, লাভ বেশী। গাংনীতে অর্থকরী ফসল হিসাবে আখ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। লাভজনক হলেও ধান চাষ ছেড়ে কৃষকরা বর্তমানে গ্যান্ডারী চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গাংনী উপজেলায় সর্বত্র গ্যান্ডারী আখ চাষ দেখা না গেলেও বর্তমানে কমবেশী দেখা যাচ্ছে। অর্থকরী ফসল হিসাবে আখ চাষের গুরুত্ব কম নয়। দেশে তো বটেই বিদেশেও আখের রস ও চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ন্যায় আখ চাষে বেশী লাভবান হচ্ছে গাংনীর কৃষকরা। একসময় অসংখ্য আখের জমি গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শোভা পেত। বর্তমানে ইক্ষু ইন্সটিটিউট বা ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র অকার্যকর হওয়ায় এবং চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে চাষীরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গাংনী উপজেলার মাটি আবাদযোগ্য না এমন ধারণা থাকায় কেউ আগ্রহ দেখাতো না। কিন্তু সে ধারণা ভেঙ্গে বর্তমানে গাংনীতে আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে আখ চাষের ব্যাপকতা বাড়তে শুরু করেছে।

পাকিস্তানী ২০৮জাতের আখ চাষ করে সফলতার মুখ দেখাচ্ছে গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউপির অন্তর্গত জুগিন্দা গ্রামের সফল চাষী নজরুল ইসলাম। আখ চাষে সফলতার গল্প শুনতে জুগিন্দা গ্রামের চিৎলা ফার্ম সংলগ্ন মাঠে কথা হলো এরকম সফল চাষী নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, একজন ঠিকাদারের ইটভাঙ্গতে গাড়ি নিয়ে খুলনাতে গিয়েছিলাম। সেখানে গ্যান্ডারী চাষ দেখতে পাই। তাদের সাথে আলাপ করে লাভজনক এই গ্যান্ডারী চাষে উদ্বুদ্ধ হই। সেখান থেকে ২০ হাজার টাকার বীজ সংগ্রহ করে বগার্কৃত ২ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। আমি গত দু’বছর ধরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গ্যান্ডারী আখ চাষ করে আসছি। গ্যান্ডারী চাষে আমি লাভবান হয়েছি। গতবছর আমি আখের জমিতে সাথীফসল হিসাবে টমেটোসহ ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছিল ৩ লাখ টাকা। এবছরও আমি বগার্কৃত ২ বিঘা জমিতে গ্যান্ডারী চাষ করেছি। এবার সাথী ফসল হিসাবে গাঁজর ছিল। গাঁজর বিক্রি করে ৬৮ হাজার টাকা উপরন্তু পেয়েছি। বর্তমানে আমি পরিচর্যা করে যাচ্ছি। আমার ২ বিঘা জমিতে ৩২ হাজারেরও বেশী আখ রয়েছে। ইতোমধ্যে আখ ক্রেতারা প্রতিপিচ ২৩ টাকা হিসাবে ক্রয় করতে আগ্রহ দেথিয়েছে। তাতে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা হবে। আমি প্রতিপিচ ২৮/৩০ টাকা হলে বিক্রি করবো। দুই এক মাসের মধ্যে বাজার মূল্য ঠিক থাকলে আরও দাম বাড়লে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমানে আমার দেখাদেখি অত্র এলাকার ৫/৬ জন চাষী আখ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি আরও জানান, আমাকে কখনও কৃষি অফিস থেকে কোনরকম পরামর্শ দেয়নি। কৃষি অফিসারের মাধ্যমে প্রশিক্ষন গ্রহন করে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করলে আরও কৃষকরা লাভবান হতো। এই গ্যান্ডারী চাষ খুব লাভজনক। তাই আমার পরামর্শ, বেকার যুব সমাজের কাছে। তোমরা আখ চাষে এগিয়ে এলে তোমাদের বেকারত্ব কাটবে।

তিনি বলেন, বেলে দোআঁশ, পলি দোআঁশ ও উচু জমিতে গ্যান্ডারী আখ চাষ ভাল হয়। খরচ বিঘা প্রতি দেড় লাখ টাকার মত । গ্যান্ডারী আখ চাষে জৈব সার ও রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশ ব্যবহার করতে হয়। খরচের মধ্যে লেবার খরচটাই বেশী। কারন সব সময়ই জমিতে আখের যত্নে লেবার নিয়োজিত রাখতে হয়। পোকা মাকড় তেমন ক্ষতি করে না। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন করা হয়। বাঁশের আঁড় করে তার টাঙ্গিয়ে আখ সোজা করে রাখতে হয়। ঝড় ঝাপটা না হলে বৈরী আবহাওয়া না হলে আখ ক্ষতি হয় না। তাই গ্যান্ডারী আবাদে ঝুঁকি কম। লাগানোর সময় ঠিকমত বালাইনাশক লিজেন্ট ব্যবহার না করলে ফলন কমে যায়। চাষের পর কীটনাশক হিসাবে ভিত্তাকু ও ক্যারাটে ব্যবহার করতে হয়।

পাকিস্তানী ২০৮ জাতের গ্যান্ডারী, মিসরী দানা জাতের আখ চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে।হাটে বাজারে গ্যান্ডারী ২০ থেকে ৫০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। রস খুব সুস্বাদু। জন্ডিস ও ডায়াবেটিস রোগীরা বেশী বেশীরস পান করে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গ্যান্ডারী চাষ লাভজনক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে গ্যান্ডারী চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে নজরুল ইসলাম প্রত্যাশা করেন।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর