অভিমান করে ঢাকা গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো সবুজ

লালমনিরহাটের সবুজ ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোর বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে বন্ধুকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের কবলে পড়ে দুদিনের মাথায় লাশ হয়ে ফিরল বাড়িতে।

মঙ্গলবার(২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন রপ্তানী এলাকায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।

এঘটনায় লালমনিরহাট শহরের কাজী কলোনীতে নিহত সবুজের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, শহরের কাজী কলোনী এলাকার মেহের আলীর ছেলে নিহত সবুজ পরিবারের সাথে অভিমান করে সোমবার তার বন্ধু একই এলাকার ফজলে মিয়ার ছেলে জাহেদুল (১৫) কে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ।

এরপর তারা লালমনিরহাটের পিংকি বাস যোগে মঙ্গলবার রাত ২ টার দিকে ঢাকা রপ্তানী এলাকায় নামে।এরপর সেখান থেকে একটি ফোনে সবুজের বাড়িতে খবর আসে তাদের ছেলে আটক রয়েছে মুক্তিপন হিসেবে ২০ হাজার টাকা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।এরপর মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়া থানা থেকে খবর আসে সবুজ মারা গেছে।

এবিষয়ে জানতে লালমানিরহাট জেলা সদর হাসপাতালে সার্জারী ওয়ার্ডে গিয়ে কথা বললে আহত জাহেদুল ঘটনার বিবরনে জানায়,‘মধ্য রাতে ঢাকার রপ্তানী এলাকায় নামার পরে সবুজ তাকে বলে এই এলাকায় তার বড় বোন বিউটি থাকে। কিন্তু তার বাসা চেনা নেই। তাই সকাল হলে খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করে রাত টা স্থানীয় ফুট ওভার ব্রিজের উপর কাটাতে বসে পরে তারা।এরপর অনুমান রাত ৩ টার দিকে অজ্ঞাত এক যুবক এসে তাদের সাথে কথা বলে হোটেলে নাস্তা খাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা দুজনেই সরল মনে তাকে অনুসরন করতে থাকে।একপর্যায়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলে ওই অজ্ঞাত যুবকের সাথে যোগ হয় আরও ৫ থেকে ৭ জন। তাদের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর সংলগ্ন নির্মানাধীন ভবনের একটি কক্ষে আটকে রেখে সাথে থাকা নগদ টাকা পয়সা নিয়ে বাড়িতে যোগাযোগের নম্বর চায় দূর্বৃত্তরা।এসময় সবুজ তার দূরসর্ম্পকের এক আত্মীয়ের নম্বর দিলে দূর্বত্তরা ফোন করে মুক্তিপন হিসেবে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। এভাবে দফায় দফায় যোগাযোগ চলে মঙ্গলবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত’।

আহত জাহেদুল আরও বলেন, ‘দূবৃত্তরা তাদের মুখের মাস্ক মুখে গুজে দিয়ে গামছা দিয়ে মুখ ও হাত বেধে কাপড় খুলে উলঙ্গ করে পেটায়। একপর্যায়ে দুজনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সকাল ৮ টার দিকে আরও একবার ফোনে যোগাযোগ করে টাকার বিষয়ে আশ্বাস না পেয়ে সবুজের উপর চড়াও হয় দূবৃত্তরা। ইটের উপর হাত রেখে ইট দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়।

এসময় দূর্বৃত্তরা একজনকে ফজল নামে ডেকে বলেছিল আরও জোরে মারতে থাক। একপর্যায়ে সবুজ নিস্তেজ হয়ে গেলে তারা একটি ভ্যান নিয়ে এসে দুজনকেই তুলে দিয়ে সটকে পরে। পরবর্তীতে ভ্যান চালক পাশে একটি মোজা তৈরির কারখানার নিকট ভ্যান উল্টিয়ে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। পরে লোকজন ভীড় করলে পরবর্তীতে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিলে ডাক্তার সবুজকে মৃত ঘোষনা করে। এরপর আশুলিয়া থানা থেকে লালমনিরহাট থানায় খবর দিলে সবুজ ও জাহেদুলের পরিবার ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসে। বুধবার রাতেই সবুজকে দাফন করা হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।তবে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহ্ আলম জানান,এই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর