সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা পঞ্চগড় পৌর এলাকায়: সমাধানের আশ্বাস মেয়রের

বর্ষা মৌসুম আসলেই চরম দুর্ভোগে পড়ে পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁদা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ভারী বর্ষণ হলে অধিকাংশ এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।

রাস্তা-ঘাটের উপর দিয়ে হাঁটু পানি প্রবাহিত হয়। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি উঠে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা কাজ না করায় ড্রেনের দূর্গন্ধযুক্ত নোংরা ও ময়লা আবর্জনার পানি উপচে পড়ে সড়কে। ফলে জনদূর্ভোগ বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল ভরাট ও স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাঁধা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্টরা।

পঞ্চগড় পৌরসভা প্রথম শ্রেনীর হলেও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার সমস্যাই বর্তমানে পৌরবাসীর প্রধান সমস্যা। আকষ্মিক ভারি বর্ষণে পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলামবাগ, কায়েতপাড়া, ডোকরোপাড়া, রামেরডাঙ্গা, রাজনগর, খালপাড়া, নিমনগড় সহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

হাটবাজারগুলোও কাঁদা-পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। পৌর এলাকার ডিসি অফিস, জজকোর্ট, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল, এম আর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল করে কালভর্টা করা ও স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন পৌর শহরের দূর্ভোগের কথা ক্ষোভের সাথে বলেন, পঞ্চগড় পৌরসভার পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের দুই পাশে যে যার মত ঘরবাড়ি দোকানপাট অফিস আদালত নির্মাণ করায় খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ নির্মাণ, ড্রেনের ওপর অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজ নির্মাণ আর ব্রীজের মুখগুলো ছোট হওয়ায় পানির প্রবাহমান গতি কমে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

পৌর শহরের ডোকরোপাড়া এলাকার মশিউর রহমান বলেন, ছোট ছোট ড্রেন নির্মাণ করা এবং ড্রেনের ওপর স্লাব না থাকায় পলিথিন, বোতল সহ বিভিন্ন ময়লা পড়ে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে পড়ে। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পৌর এলাকায় পর্যাপ্ত ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় স্থানীয়রাও তাদের ময়লা আবর্জনা ড্রেনের মধ্যে ফেলছে। ড্রেনগুলোতে স্লাব থাকলে ড্রেনে ময়লা ফেলতে পারতো না।

পঞ্চগড় পৌরসভার কামাতপাড়া এলাকার হাসনাত হামিদুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়গুলো আমরা বার বার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসেনি।

পৌর এলাকার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা রঞ্জন কুমার জানান, বৃষ্টি শুরু হলেই আমার বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় ড্রেনের ময়লা পানি রাস্তায় উপচে পড়ে। নোংরা ময়লা এসব পানির উপর দিয়েই আমাদের চলতে হয়। কামাতপাড়া এলাকার আসমা আক্তার নামে এক গৃহিনীও একই অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনগুলো সংস্কার ও পরিস্কার না করায় ড্রেনগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে।

স্থানীয় কাউন্সিলরকে ড্রেনগুলো সংস্কার ও পরিস্কারের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। একই এলাকার সফিজুল ইসলামও এমন অভিযোগ করেছেন। এমআর কলেজ রোড এলাকার রিনা আকতার জানান, বৃষ্টি শুরু হলেই আমাদের এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘর-বাড়ি,রাস্তা-ঘাটে পানি জমে চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমার রান্না ঘরে পানি উঠেছে। ঠিকমত রান্নাবান্না করতেও পারিনা। রান্না না করতে পারলে আমরা খাবো কি।

পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম জলাবদ্ধতা ও কিছু ড্রেনের সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বড়-বড় কয়েকটি ড্রেন নির্মাণ শেষ হয়েছে। পৌরবাসিদের মধ্যেও কিছু মানুষ বাড়ির ময়লা আবর্জনা ড্রেনে ফেলছেন। প্রতিনিয়তই আমাদের পরিছন্ন কর্মীরা ড্রেনগুলো পরিস্কার করছেন। তারপরও ড্রেনের ময়লা পানি নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হচ্ছে। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে এ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ অন্যান্য প্রকল্পের বরাদ্দ পেলে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর