টেকনাফে পল্লী বিদ্যুতের ভেল্কি বাজিতে অতিষ্ট ৫৫ হাজার গ্রাহক

সীমান্ত উপজেলা কক্সবাজারের টেকনাফে বিদ্যুৎ সমস্যায় জর্জরিত আড়াই লাখের বেশী মানুষ। বছরের পর বছর জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কোন ভাবেই লাগব হচ্ছেনা। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাহিদার অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও সমস্যা আগের মতোই রয়ে গেছে। তবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবী লোকবল কম ও পুরাতন তার ফেলে দিয়ে নতুন তার প্রতি স্থাপনই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ এর আওতাধীন রয়েছে ৫৫ হাজার গ্রাহক। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ জুলস পাওয়ার লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি ‘টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড নামএ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ৮৭ হাজার প্যানেল আর ৩৪১ টি সোলার টেবিল ও পাঁচ টি সাব-স্টেশনের সমন্বয়ে গড়ে তোলে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের প্রথম সোলার পার্ক।

এই ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। চাহিদা অনুপাতে স্থানীয় ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন থাকার পরেও দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ বিহীন থাকে গোটা টেকনাফ। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। একবার গেলে অন্তত ৩/৪ ঘন্টা বিদ্যুতের দেখা মেলেনা। ফলে অতি বিদ্যুৎ নির্ভর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বেকায়দায়।

স্থানীয়দের দাবী, সামান্য হাওয়া বাতাস বা বৃষ্টি বাদল হলেই বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বিদ্যুতের দেখা মেলেনা। অনেক সময় লাইনে সমস্যা হলে তাদের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানানোর ২৪ ঘন্টা পরেও সমাধান মেলেনা। অনেক সময় আবার হট লাইনের নাম্বারটি বন্ধ থাকে। অথচ পাশ্ববর্তী উখিয়া উপজেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। এছাড়াও মাস শেষে রিডিং চেক না করে অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা অহরহ রয়েছে। সুতরাং পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মর্জির কাছে জিম্মি হয়ে আছে বলে আক্ষেপ তাদের।

টেকনাফ সরকারী হাসপাতালে তত্বাবধায়ক ডাঃ টুটু চন্দ্র শীল জানান, উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ নির্ভর। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইভেট ল্যাবে পরীক্ষা করতে অক্ষম এমন অনেক গরীব রোগী সরকারী হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে রিপোর্ট না পেয়ে বাসায় ফিরে যেতে হয়। এভাবে একদিনের চিকিৎসা হচ্ছে দুই দিনে। এছাড়া বিভিন্ন সময় অতি প্র‍য়োজনীয় অপারেশন গুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়না।

বেসরকারী সংস্থার চাকুরীজীবী ইসমাঈল অকিব জানান, ভোর ৩টায় বিদ্যুৎ গেলে পরের দিন ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। অফিস শেষে বাসায় এসে কম্পিউটারে অফিসের প্র‍য়োজনীয় বাকী কাজকর্ম করা যায়না। ফলে অফিসে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

আইটি নির্ভর ব্যবসায়ী ও বিদ্যুৎ চালিত মেশিনারীজ হার্ডওয়ার্ড কারখানার মালিকদের দাবী সপ্তাহে ২দিন, দিনের বেলায় কারেন্ট থাকলেও বাকী সময় জুড়ে বিদ্যুতের দেখা মেলেনা। ব্যবসা না হওয়ার কারনে মাস শেষে দোকান ভাড়া শোধ করতেও সমস্যায় পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিকে মগের মল্লুক বলে দাবী করেন তারা।

এসব বিষয়ে টেকনাফ পল্লীবিদ্যুৎ এর ডিজিএম, মুমিত চৌধুরী ‘বার্তা বাজারকে’ জানান, অফিসে মোট (লাইনম্যান) লোকবল ১৯ জন আরো ১০ জন লোকবল সংকট। তাই কয়েকটা সমস্যা এক সাথে হলে সমাধানে বেগ পেতে হয়। এছাড়া খুটির মেইন তার গুলো অতি পুরাতন তাই হালকা ঝড়ো বাতাস বা অতি গরমে তার ছিড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যয়ে মূল কারণ। পুরাতন তার গুলো পাল্টানোর জন্য নতুন একটি প্রকল্প কাজ শুরু করেছে। এক বছরের মাথায় গোটা উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সর্বরাহ করা সম্ভব হবে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর