ঈশ্বরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, শহীদের আত্মত্যাগ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিখাদ দেশপ্রেমের চূড়ান্ত ফসল এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

এক নদী রক্ত, ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা-বোনের সভ্রম ও অপূরণীয় ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ সংরণের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের পলাশকান্দা গ্রাম পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পলাশকান্দা গ্রাম। এলাকাবাসী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের স্মৃতিচারণে জানা যায়, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পাক হানাদার বাহিনী তখন দিশেহারা।

এ সময় মুজিব বাহিনীর একটি গেরিলা দল গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম পলাশকান্দায় অবস্থান নেয়। মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মোঃ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দলে ছিলেন মোঃ তমিজ উদ্দিন, মরহুম আনোয়ারুল হক খায়ের, আঃ জলিল, নুরুল আমীন, আঃ সাত্তার, এ কে এম নজরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, সিরাজুল ইসলাম, মোখলেছৃুর রহমান চাকদার, মতিউর রহমানসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা।

পলাশকান্দায় অবস্থানরত মুজিব বাহিনীর গেরিলা দলের উদ্দ্যেশ্য ছিল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী পাক হানাদার বাহিনীর কনভয় ও ক্যাম্পের উপর হামলা করা। কিন্তু একই গ্রামের অধিবাসী রাজাকার মজিদ মাষ্টার মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের অবস্থানের খবর অত্যন্ত সুকৌশলে পৌঁছে দেয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে।

সঙ্গে সঙ্গেই পাক হানাদার, রাজাকার ও আলবদরের সম্মিলিত বাহিনী পলাশকান্দায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়। এসময় মুজিব বাহিনীর দলটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈশ্বরগঞ্জের মাইজকা হানাদার ক্যাম্প আক্রমনের জন্য রওয়ানা হবার কথা ছিল।

কিন্তু ইতোমধ্যে হানাদার বাহিনী তিনদিকে ঘিরে ফেলে এবং বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে থাকে। কমান্ডার মুজিবুর রহমান ও পাল্টা গুলি ছোঁড়ার আদেশ দেন। আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এসময় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোললেও পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় জসিম উদ্দিন হানাদার বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন। এসময় হানাদারের হাতে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম।

জানা যায়, ধরাপড়া তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে পরে ব্রহ্মপুত্রের নদীর চরে তাদের চোখ বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে উপরে ফেলে পরে হত্যা করে। পরদিন ১ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে পলাশকান্দায় সমাহিত করা হয় ও প্রচন্ড ােভে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার মুজিদ মাষ্টারের কান কেটে দেয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান চাকদার মারাত্মক আহত হন।

মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান রক্ষার অংশ হিসেবে এবং সেই স্থান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য মঙ্গলবার পলাশকান্দা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো. জাকির হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল, তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা, মুক্তিযোদ্ধা এম এ মনসুর (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট)।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধের রক্তাক্ত স্মৃতি পলাশকান্দা গ্রামে বিরাজমান। স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি সংরক্ষণ ও তরুণ প্রজন্মকে জানাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর