তিস্তার গর্ভে স্বপ্ন বিসর্জন, স্থায়ী বাঁধের আশায় তিস্তা পাড়ের মানুষেরা

নদীমাতৃক বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটে স্রোতস্বিনী তিস্তার ভাঙ্গনে প্রতিবছর বাস্তুহারা হয় শতাধিক পরিবার।তাদের স্বপ্নগুলো তারা বিসর্জন দেয় তিস্তার গর্ভে।

চতুর্থ দফার বন্যার ফলে নদী ভাঙ্গনে নতুন করে বাস্তুহারা হয়েছে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন এর তিন শতাধিক পরিবারের লোকজন।

ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া রজবপাড়া গ্রামে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়,ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আহাজারি ও অসহায়ত্ব।ভাঙ্গনে রাতারাতি কেউ হারিয়েছে সর্বশেষ অবলম্বন বসতবাড়ি সহ বাস্তুভিটা।আবার কেউ ভাঙ্গনের আশঙ্কায় বাড়ি ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে অন্যত্র।

তিস্তার ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় নিঃস্ব হয়েছেন রজবপাড়া গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মোঃ নইমুদ্দিন(৯০)।তিনি জানান,প্রতিবছর বন্যা আর নদীভাঙ্গন হবেই হবে।এটা আমাদের প্রতিবছর মেনে নিতে হয়।নদীর ভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছর আমরা বাস্তুহারা হয়ে যাই।এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।আমার সব জমি-জায়গা তিস্তার গর্ভে চলে গেছে।আমি এখন নিঃস্ব।

স্রোতস্বিনী তিস্তার ভাঙ্গনের কারনে বাস্তুহারা আরেক প্রবীণ বাসিন্দা মোঃ কছিনুদ্দিন(৭৫) বলেন,প্রতিবছরের বন্যা ও ভাঙ্গনের জন্য আমরা সবাই সর্ব শান্ত হয়েছি। তিন দিন আগে একজন মারা গেছে,তার কবরটাও হয়তো আজ ভেঙ্গে যাবে,শুধু তাই নয় একাধিক কবর নিশ্চিন্হ হয়ে গিয়েছে।ত্রাণ সহযোগিতা যতটুকু পাই তা দিয়ে জীবন বাঁচলেও জীবন চলে না।স্থায়ী একটি বাঁধ না থাকায় প্রতিবছর আমাদের বন্যা ও ভাঙ্গনের শিকার হতে হয়।

শুধু নইমুদ্দিন ও কছিমুদ্দিনই নয় ভাঙ্গনের শিকার সেই এলাকার সকল মানুষের মন্তব্যই একই।প্রতিবছর বন্যা ও ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হয়ে তারা ক্লান্ত।একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এখন তাদের একমাত্র চাওয়া।

তবে জানা গেছে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কথা।প্রায় ৮হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তিস্তার দুধারের ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা রয়েছে।শুধু তাই নয় পর্যটকদের লং ড্রাইভের জন্য বাঁধের দুধারে থাকবে মেরিন ড্রাইভ।এই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহন সহ নদীর ধারে নির্মাণ করা হবে হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্ট।গড়ে তোলা হবে পর্যটন নগরী।

এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে ভাঙ্গা ঘর বাঁধছে তিস্তা পাড়ের মানুষেরা।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর