আড়তে হাজির র‌্যাব, নষ্ট করা হলো ১২ হাজার কেজি আম

রাজশাহীর বাগান থেকে হিমসাগর আম পাড়ার কথা আগামী ২৮ মে। এরপর তা ঢাকায় আনার কথা। এমনটাই নির্দেশনা ছিল রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের। সাতক্ষীরার ল্যাংড়া ৬ জুনের পর বাজারে আসার কথা। কিন্তু এই হিমাসগর ও ল্যাংড়া আম এখনই মিলছে ঢাকায়।

আজ সকালে র‌্যাব সদস্যদের নিয়ে যাত্রাবাড়ীর ফলের আড়তে হাজির হন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি দেখতে পান ফলের আড়তে শুধু হিমসাগর আর ল্যাংড়ার পেটি।

অভিযানে র‌্যাবের সঙ্গে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিরা। তারা বললেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আমগুলো পাকানো হয়েছে।

তাদের মতামত পেয়েই মোট ১২ হাজার কেজি অর্থাৎ ৩২১ মণ আম জব্দ করা হয়। পরে একটি পিকআপ ভ্যানের চাকার নিচে পিষ্ট করা হয় আমগুলো।

অভিযানে ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

আজ সকালে যাত্রাবাড়ীর আড়তে অভিযান চালানোর শুরুতে সারওয়ার আলমকে ও র‌্যাব সদস্যদের দেখে অনেকেই দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান।

এরপর তিনটি দোকানে গিয়ে হিমসাগর আম দেখতে পান র‌্যাব সদস্যরা। আমগুলোর অধিকাংশই নরম ও পাকা ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতামত এবং ব্যবসায়ীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমে কেমিক্যাল মেশানোর কথা নিশ্চিত হন ম্যাজিস্ট্রেট।

দীর্ঘ কয়েক বছর ফলের আড়তে অভিযান করা ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘বাজারে এখন শুধু গুটি আম থাকার কথা। ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে আপরিপক্ব হিমসাগর আমকে পরিপক্ব করে তুলছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আজ মে মাসের ২২ তারিখ, আরও ১৫ দিন আগে থেকে বাজারে হিমসাগর আম দেখা যাচ্ছে। ল্যাংড়া আসতে আরও আটদিন বাকি। এগুলো সব কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। এ বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট একটা আদেশও দিয়েছেন। তাই বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এই অভিযান।’

আমে কেমিক্যাল মেশানোর কথা স্বীকার করে সাদ্দাম হোসেন নামে অভিযুক্ত এক আম ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এখানে আম পেকে গেছে, দ্রুত নিয়ে যাও। আমরা নিজেরাও জানি পাকে নাই, কিন্তু তাদের চাপাচাপিতে আমাদের আম কিনতে হয়েছে। আম এনে দেখি এগুলো পাকেনি। তাই কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্য অনুযায়ী, কেমিক্যালমিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নারীরা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, যারা আমের ব্যবসা করে তারা কেউ চাষি না। তারা ব্যবসায়ী। তারা ইতোমধ্যে আমের বাগান কিনে ফেলেছে। তাদের মধ্যে আগে বাজারে আম নেয়ার একটি প্রতিযোগিতা কাজ করে। তাই তারা মনে করেছিল আম এখন বাজারে এনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করবে। তাই এগুলো এনে বিক্রি করছিল।

বাজারের অন্যান্য ফলে কেমিক্যালের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিলে বাজারে ফলের অবস্থা ভালো। বাজারে আগে ফরমালিন মেশানোর মতো ঘটনা ঘটতো, সেটা এখন নেই। এ বছর শুধু আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ খেঁজুর পেয়েছি।

উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ও লক্ষ্মা বা লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ আগামী জুন, আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা আম পাড়া যাবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর