প্রবাসীদের জন্য সুখবর

প্রবাসীদের জন্য সুখবর আসছে বাজেটে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রবাসীরা বছরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তার ওপর ৩ শতাংশ হারে এ সুবিধা দেওয়া হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে রফতানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যে একাধিক হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর বাইরে প্রথমবারের মতো সেবা খাত হিসেবে প্রবাসী আয়ে একই সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যারা বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাবেন, শুধু তারাই প্রণোদনা পাবেন। মূলত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে প্রবাসীদের এ সুবিধা দেওয়া হবে।

সরকার আশা করছে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি অর্থাৎ প্রবাসীদের জন্য এ সুবিধা কার্যকর হলে দেশে বৈ ধপথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু প্রণোদনা দিলে হবে না। নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছেন প্রবাসীরা। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাহলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। অন্যদিকে, জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি কমাতে হবে। তা না হলে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট রেমিট্যান্স পাঠান প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার অর্থাৎ ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হয়, সমপরিমাণ রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশে এসেছে। বিভিন্ন দেশে কতজন বাংলাদেশি কাজ করছেন, তার সঠিক রেকর্ড সরকারের কাছে নেই। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সংখ্যা এক কোটির ওপরে। জানা যায়, এদের বড় একটি অংশ অবৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনা দিতে এ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বাজেটে। বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হবে। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি তৈরি করবে। ওই নীতিমালার আলোকে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে। বর্তমানে রফতানিকে উৎসাহিত করতে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, বস্ত্র পাট ও চামড়াজাতসহ সতেরটি খাতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ এবং সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। এখন নতুন করে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে ৩ শতাংশ হারে।

প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ব্রুনাই সফরকালে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে পাঠান এবং দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের সুখ-দুঃখ দেখার দায়িত্ব সরকারের। দেশে ফেরার পর প্রবাসীদের কল্যাণে বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। ওই নির্দেশ মোতাবেক আসন্ন বাজেটে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগেও প্রবাসীদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে রেমিট্যান্স ফি ১ শতাংশ নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন ২০১৬-১৭ বাজেটে। তখন আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে ওই পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, প্রবাসীদের আয়ে নগদ প্রণোদনার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। বর্তমানে প্রণোদনা খাতে বছরে সরকারের ব্যয় হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। নতুন করে প্রবসীদের প্রণোদনা দিলে এতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা।

জানা যায়, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তেমন সুযোগ সুবিধা পান না। বর্তমানে প্রবাসী আয় করমুক্ত। এর বাইরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। কম সুদে ব্যাংক ঋণ, রেমিট্যান্স ফি কমানোসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এদের সুযোগ-সুবিধা দীর্ঘ সময় ধরে আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন সংশ্নিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।

যোগাযোগ করা হলে জনশক্তি রফতানিকারক সমিতি ‘বায়রার’ মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, বর্তমানে প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে ব্যাংকগুলো ৩ থেকে ৪ শতাংশ চার্জ কাটে। অতিরিক্ত চার্জের কারণে অনেকেই ব্যাংক চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফি শূন্য করা হলে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হবেন তারা। এতে করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে।

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা ‘সানেমের’ নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো টাকা ভোগে ব্যয় না করে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে সেবার মান আরও ভালো করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ভারতসহ অনেক দেশে প্রবাসীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকেও অন্যান্য দেশের মতো একই ধরনের সুযোগ দিতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে দেশে প্রবাসী আয় বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে বলে মনে করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে এক হাজার ২৭৬ কোটি ডলার ও এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত এসেছে এক হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংকের অভিবাসন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর