বালিয়া ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের কাজে অভিযোগ

মোঃ আল মামুন খান, সাব-ব্যুরো প্রধান (সাভার/ধামরাই):সরকার বিভিন্ন ইউনিয়নে বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচীর দ্বারা উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। এর ভিতরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী অন্যতম। এই প্রকল্পের মূল বিষয়টিই হলো হত দরিদ্র শ্রেনির মানুষদের কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে একাধারে তাদের প্রতিদিনের সংসার চলার ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি গ্রামীন অবকাঠামোর উন্নয়ন করা। ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে সরকারী বরাদ্দকৃত অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে আসা দুইটি প্রকল্পের একটিতে অতি দরিদ্র শ্রমিক ব্যবহারের পরিবর্তে ভেকু ও ড্রেজার ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট থেকে তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্ত তথ্যের সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এই অনিয়মের বিষয়ে জানা যায়।

২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে বালিয়া ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট দুইটি প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ আসে। প্রকল্প দু’টি হলো- সুত্রাপুর এইচবিবি রাস্তা হতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভায়া নুরু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৫,৫২,০০০ টাকা এবং বালিয়া পাকা রাস্তা হতে জমিদার বাড়ির ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৪,০০,০০০ টাকা।

সরেজমিন রাস্তা দুইটি পরিদর্শণে গিয়ে সুত্রাপুর এইচবিবি রাস্তা হতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভায়া নুরু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত নির্মিত রাস্তার কাজ বিধি মেনে অতি দরিদ্র শ্রমিক দিয়ে মাটির কাজ করানো হলেও দ্বিতীয় প্রকল্পটি সরকারী বিধির বাইরে গিয়ে ‘ভেকু’ (খনন যন্ত্র) এবং ড্রেজার ব্যবহার করে নদী থেকে বালি এনে রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে এলাকাবাসী জানান।

এব্যাপারে বালিয়া গ্রামের তিনজন ভিন্ন শ্রেণি-বয়সের অধিবাসীর নিকট কথা বললে তারা ভিডিও বক্তব্যে এই অনিয়মের কথা জানান। মীর মশিউর রহমান নামের বালিয়া গ্রামের একজন বলেন, বালিয়া পাকা রাস্তা থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত নির্মিত রাস্তাটির কাজে প্রথমে ভেকু ব্যবহার করে রাস্তার মাটি কেটে দুই পাশে ফেলা হিয়। এরপর নদী থেকে ড্রেজার ব্যবহার করে বালি এনে সম্পূর্ণ রাস্তাটির কাজ শেষ করা হয়। একজিন স্কুল ছাত্র এবং একজন স্থানীয় নারী অধিবাসী এই প্রতিবেদকের নিকট ভিডিও বক্তব্যে ড্রেজার ও ভেকু ব্যবহারের কথা জানান। তবে ওই নারী এও জানান যে, রাস্তাটির সামান্য কিছু অংশ অল্প কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে শুধুমাত্র দুই পাশের ‘সাইড বেন্ডিং’ এর কাজ করানো হয়।

বালিয়া পাকা রাস্তা থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত নির্মিত রাস্তাটির কাজ স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য রওশন আরা এর তত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে জেনে তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার কাজটি করতে গিয়ে স্থানীয়দের ভিতরে অনেকে তাদের বাড়ির সামনে থেকে মাটি দিতে না চাওয়ায় এই অনিয়মটুকু করতে হয়েছে। এজন্য ভেকু যন্ত্র ও ড্রেজার ব্যবহার করেছি আমরা।

বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আহম্মদ হোসেন এর নিকট দরিদ্র শ্রমিকদের পরিবর্তে ভেকু ও ড্রেজার ব্যবহার করে কেনো রাস্তার কাজটি করা হলো জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমত সরকার প্রতিদিন এক একজন শ্রমিকের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয় (শ্রমিক প্রতি রোজ ২০০ টাকা) তাতে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চায় না। ন্যুণতম ৩৫০/৪০০ টাকা প্রতিদিন না পেলে কেউ কাজ করে না। দ্বিতীয়ত এই রাস্তাটি বানাবার সময় অনেক বাড়ির মালিক তাদের বাড়ির সামনে থেকে মাটি দিতে অনীহা প্রকাশ করায় ভেকু ব্যবহার করতে হয়েছে।

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করে এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কল রিসিভ না করায় এবিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় এবিষয়ে তার ও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর