ইউএনওর ওপর হামলা চালায় তার অফিসেরই কর্মচারী রবিউল

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীকে সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢুকে হামলা করেছে ইউএনও কার্যালয়েরই চাকরিচুত্য রবিউল ইসলাম (৪৩) নামের এক কর্মচারী। রবিউল ইসলাম ইউএনওর ওপর হামলা চালিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পুলিশের কাছে।

আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য এই তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ ও হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত জিনিসপত্রের আলোকে আমরা বেশ কয়েকজনকে ঘটনাসংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা একজন ব্যক্তিকে আটক করেছি। সে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে বক্তব্য প্রদান করেছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা বেশ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেটির সাথে আমরা মিলিয়ে দেখছি। আাজকে (শনিবার) তাকে আমরা বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করব এবং আমরা তার রিমান্ড চাইব। রিমান্ডে নিয়ে আসে তাকে আমরা আরো জিজ্ঞাসাবাদ করব। ঘটনা সংক্রান্তে সম্পূর্ণ তথ্য সেটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি এখনো চলমান রয়েছে, আমি মনে করি যে এই পর্যন্তই আমাদের বক্তব্য। পরবর্তীতে আমরা যখন তদন্তটি শেষ করব তখন আরো যদি বিস্তারিত জানার থাকে তখন জানাব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিইআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘রবিউল ইসলামের বাড়ি হচ্ছে বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে। রবিউল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন। রবিউলের সাথে অন্য কারো জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। কারো সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই জানাব।

এই ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি আসাদুল ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, ‘আসাদুলের আজকে ৭ দিনের রিমান্ড শেষ। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। আসাদুলকে আর রিমান্ড চাওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর রবিউলকে আটক করা হয়। আটক রবিউল ইসলাম জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে।

এদিকে অনুসন্ধানে রবিউল ইসলামের বিষয়ে উঠে আসে টাকা চুরির ঘটনা। এর আগে রবিউল ইসলাম দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোতে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়। সেখান থেকে বছর খানেক আগে রবিউল ইসলামকে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়ে রবিউল ইসলাম ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ৫০ হাজার টাকা চুরি করে। সেই টাকা চুরির অপরাধে রবিউল ইসলামকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিভাগীয় মামলা দায়ের হলে মামলার তদন্তে টাকা চুরির সত্যতা পাওয়া গেলে রবিউল ইসলামকে চাকরিচুত্য করা হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই ইউএনওকে হত্যা চেষ্টা চালায় বলেও ধারণা করছেন প্রশাসনের অনেকেই।

রবিউল ইসলামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলা হলেও ঘটনার দিন রবিউল ইসলাম সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঘোড়াঘাটে অবস্থান করছিলেন বলেও জানা গেছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। যদিও দিনাজপুর শহর থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিউল ইসলাম ঘটনার দিন বিকাল বেলা দিনাজপুর শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড হতে একটি বাসে উঠে ঘোড়াঘাট পৌঁছায়।

রবিউল ইসলাম জুয়ায় আসক্ত ছিলেন বলেও জানা যায়। জুয়া খেলতে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে ধারদেনা করেন। এতে অনেক মানুষ রবিউল ইসলামের কাছে টাকা পায় বলেও জানান অনেকেই। এই ঘটনায় ইউএনও অফিসের নৈশ প্রহরী নাদিম হোসেন পলাশেরও জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। রবিউলকে সহযোগিতা করেছেন পলাশ। এছাড়াও রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ইউএনওর কার্যালয়ে চাকরি করার সুবাধে কোথায় কি আছে সেগুলোও জানা ছিল তার। তবে এই ঘটনায় আরো কারো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেই বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখতে পুলিশ।

এদিকে আজ শনিবার বিকালে আটক রবিউল ইসলামকে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক। শনিবার বিকালে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (আমলি আদালত-৭) ইসমাইল হোসেন এই আদেশ প্রদান করেন।

দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পক্ষ থেকে আটক রবিউল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল। বিজ্ঞ বিচারক ৬দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ইউএনওকে হামলার ঘটনায় সরকারি বাসভবনের নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর