নামাজরত ব্যক্তির মৃত্যু সৌভাগ্যের

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নামাজরত অবস্থায় বেশ কয়েকজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। বাকিরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা পুরো দেশ নাড়িয়ে দিয়েছে। স্বজন হারানোর বেদনায় যেমন শোকে মুহ্যমান পরিবার ও স্বজনরা, তেমনি গোটা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ।

তবে সান্ত্বনার কথা হলো, যাঁরাই এই ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। ইনশাআল্লাহ, তাঁরা মহান আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদান পাবেন। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ কোনো ব্যক্তির ভালো চান, তাকে ‘মধুময় করেন।’ কেউ রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল মধুময় করার মানে কী?’ আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজে লিপ্ত করেন এবং সে অবস্থায় তাকে মৃত্যু দান করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৭৪৩৮)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে মৃত্যুর আগে হেদায়েত নসিব করেন। তাওবা নসিব করেন। সে পাপকাজ ত্যাগ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে এবং আমৃত্যু সে নেক আমলের মাধ্যমেই জীবন অতিবাহিত করে। মধু যেমন খাবারের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, তেমনি নেক আমল মানুষের জীবনকে মধুময় করে দেয়। পূত (পবিত্র) করে দেয়। সুখময় করে দেয়।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যখন আল্লাহ কোনো মানুষের কল্যাণ চান তাকে পবিত্র করেন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, কিভাবে বান্দাকে পবিত্র করা হয়, রাসুল (সা.) বলেন, তার মনে ভালো কাজের উদ্রেক ঘটিয়ে তাকে ভালো কাজে লিপ্ত করা হয়, এবং সে অবস্থায় তার জান কবজ করা হয়। (তবরানি, হাদিস : ৭৯০০)। অর্থাৎ আল্লাহ যার ভালো চান তাকে এমন হেদায়েত নসিব করেন যে সে পাপমুক্ত পরিশুদ্ধ জীবনের সন্ধান পেয়ে যায়। আমৃত্যু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়।

যাদের মৃত্যুটা মহান আল্লাহ নামাজরত অবস্থায় দিলেন, তারা কতই ভাগ্যবান যে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় তারা মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিল। ইবাদতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু যে কতটা সৌভাগ্যের তা রাসুল (সা.)-এর আরো কিছু হাদিস দ্বারা বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক বান্দা কিয়ামতের দিন ওই অবস্থায় উত্থিত হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২৪)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক (মুহরিম) ব্যক্তি (হজের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) মারা গেল। তখন নবী (সা.) (সাহাবাদের) বলেন, তাকে কুলপাতার পানি দ্বারা গোসল করাও এবং তার কাপড়েই তাকে কাফন দাও। তার মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকবে না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় ওঠানো হবে। (নাসায়ি, হাদিস : ২৭১৪)

সুবহানাল্লাহ! এই হাদিসগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, নারায়ণগঞ্জের দুর্ঘটনায় আমাদের যে মুমিন ভাইয়েরা ইন্তেকাল করেছেন মহান আল্লাহ অবশ্যই তাঁদের শহীদি মর্যাদা দান করবেন। কারণ রাসুল (সা.) আগুনে পুড়ে মৃতদের শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। জাবির বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮০৩)

মহান আল্লাহ ওই ঘটনায় নিহতদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন, আহতদের দ্রুত সুস্থতা দান করুন। তাঁদের পরিবারকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
(লেখাটি একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন ‘মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা’)

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর