ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসছে না কেন?

এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ রেকর্ড গড়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদে শুধুমাত্র সহসভাপতি এবং সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি সব পদেই বিজয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ।

হল সংসদ গুলোতেও ছাত্রলীগের একাধিপত্ব ছিল সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের এই বিপুল বিজয় আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্বের পথ সুগম করে দিবে। এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকিন্তু ছাত্রলীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ থেকে বেড়ে ওঠারা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারছেন না। নেতৃত্ব নিতে পারছেন না মূল দলের। বিশেষ করে আশির দশকের পর থেকে যেন ছাত্রলীগ করার পর থেকেই নেতৃত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তারা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারছে না।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের যে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং মন্ত্রিসভা, তার দিকে তাকালে দেখা যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে ওবায়দুল কাদের ও এনামুল হক শামিম ছাড়া কেউই মন্ত্রী নেই। ছাত্রলীগ থেকে অন্য যারা মন্ত্রী হয়েছেন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তারা ছাত্রলীগে থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন না। যেমন শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি। তিনি ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার নেতা ছিলেন। তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ছিলেন। কিন্তু মূল নেতৃত্বে এরা কেউ ছিলেন না। দেখা যায় যে, ছাত্রলীগের আশির এবং নব্বইর দশক থেকে দেখা যায়, ছাত্রলীগের যারা মূল নেতৃত্বে ছিলেন তারা বেশিরভাগই ছিটকে পড়েছেন, বিভ্রান্ত হয়েছেন অথবা জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা পাননি। এটার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যারা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা মনে করছেন যে, দীর্ঘদিন দেশে সামরিক শাষন, অগণতান্ত্রিক শাষন থাকার কারণেই নেতৃত্বের বিকাশ সঠিকভাবে ঘটেনি। এইজন্যই ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারেননি।

এই প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং প্রবীন রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার পর বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি নানাভাবেই দূষিত করা হয়েছে এবং ছাত্র রাজনীতিতে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে যে কারণে ছাত্রলীগের রাজনীতি অনেকাংশেই বিকশিত হতে পারেনি। ছাত্রলীগকে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পথ দিয়ে এগুতে হয়েছে যার ফলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যারা ছিল, তারা এমনভাবে নিগৃহীত এবং নির্যাতিত হয়েছে যে ভবিষ্যতের নেতৃত্বর জন্য নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেননি। অবশ্য বর্তমান পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এনামুল হক শামিম মনে করেন ভিন্ন কথা। তিনি মনে করেন,‘ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঠিকই বিকশিত হচ্ছে এবং তারা কোন পদ পদবি ছাড়াই ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছেন। শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নয়, আজ যে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী এবং আওয়ামী লীগ যে তৃনমূলে এত সংগঠিত, সেটার মূল কারণ হলো ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকুক বা না থাকুক যারা ছাত্রলীগ থেকে এসেছেন, তারাই আজকে আওয়ামী লীগের মূল প্রাণ শক্তি বলে তিনি মনে করেন। তবে দেখা যাচ্ছে যে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে যারা বিভিন্ন সময় নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যে অল্প কয়জনই জাতীয় সংসদ বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাদের অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা গেছে। অনেকে অন্য দলে চলে গেছেন। যারা আছেন তাদের মধ্য দিয়ে অনেককে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, এটার একটা বড় কারণ বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কোঠারি স্বার্থ দেখা হয়েছে, বিভিন্ন নেতারা তাদের অনুগত এবং অনুগ্রহপুষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে পদ দেওয়ার জন্য লবিং হয়েছে। যার ফলে তাদের উপযুক্ত যোগ্যতা ছিল না। ভবিষ্যতের জন্য তারা বেড়ে উঠতে পারেনি। যেমন নব্বইয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব যাকে নির্বাচিত করার পেছনে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই গ্রুপ এবং কোটারি স্বার্থর প্রভাব ছিল, অনন্যপায় হয়ে হাবিবকে ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এমন অনেক ছাত্রলীগ নেতাই তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন এই সমস্ত ক্ষীন বিষয়ের প্রতি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছিল বলে ছাত্রলীগকে পুনর্গঠিত এবং পুনর্বিন্যাস্ত করার উদ্যোগহ নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের বর্তমান যে কমিটি করা হয়েছে তা অনেক যাচাই বাছাই করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সেইজন্যই ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সাফল্য এনেছে ডাকসু নির্বাচনে। ওই নেতা এটাও বলেন যে, শুধু ডাকসু নয়,অন্যান্য হল সংসদেও ছাত্রলীগের সাফল্য অব্যাহত থাকবে। ছাত্রলীগ অত্যান্ত ভালো ফল করবে বলে তারা মনে করে। এক্ষেত্রে দেখার বিষয় একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে যদি শক্তিশালি করতে হয় এবং তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তাকে অবশ্যই তার ছাত্র সংগঠনকে শক্তিশালি করতে হবে। ছাত্রসংগঠনই হবে তাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্বের যোগানদাতা সংগঠন। যদি ভবিষ্যতের যোগান ছাত্র সংগঠন সঠিকভাবে না দিতে পারে তাহলে মূল সংগঠন ক্ষীণকায় এবং রুগ্ন হতে বাধ্য। যেটার প্রমাণ হলো বিএনপি। সেইজন্যই ছাত্রলীগের উপর আলাদা নজর দেওয়া হয়েছে এবং ডাকসু নির্বাচন ছাত্রলীগকে আরও বিকশিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে।

— বাংলা ইনসাইডার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর