সিরাজগঞ্জে গাছে গাছে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

জৈষ্ঠের আকাশে গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের বার্তা। গ্রীষ্মের এই নিস্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরছে আপন মহিমায়।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গাছে গাছে এমন টাই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি,যে কারো চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। সারা দেশের মতোই শাহজাদপুরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি।

শাহজাদপুর বিসিক বাসষ্ট্যান্ড। বাস থেকে নেমে শহরের প্রবেশমুখে দক্ষিণ দিকে তাকালেই মহিলা ডিগ্রী কলেজ। বিশাল একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ দুর থেকে তাকালে মনে হবে বৈশাখের রৈদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়ে রক্তিম পুষ্পরাজি যেন হাত ছানী দিচ্ছে।

সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য্য।

বিসিক বাসষ্ট্যান্ডের সুইট ড্রিম হোটেলের সামনে যাত্রী ছাউনী। সেখানেও ছোট একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নান্দনিকতা উপভোগ করছে সবাই। শহরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শহীদ মিনারের উত্তর পার্শ্বে মধ্য বয়সী কৃষ্ণচূড়া গাছ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালবাসা ও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামে কৃষ্ণচূড়া গাছ লক্ষ করা গেছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে ফুল ফুটে কৃষ্ণচূড়া মুগ্ধতা ছড়িয়ে পথচারীদের থমকে তাকাতে বাধ্য করছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত।

কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশ্বস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭ থেকে ৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে।

পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত।

বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর অনেক বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। কবি সাহিত্যিকদের ছড়া-কবিতা-গানে উপমা হিসেবে নানা ভঙ্গিমায় এসেছে এই ফুলের সৌন্দর্য্য বর্ণনা। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে।

কবিগুরু রবি ঠাকুরের ভাষায় ‘গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি’ আজ টিকে আছে নড়বড়ে অস্তিত্ব নিয়ে। তবে ক্রমে ক্রমে বাড়ছে কৃষ্ণচূড়া গাছের কদর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শোভাবর্ধনে কৃষ্ণচূড়া গাছ অতুলনীয়। তাই সৌন্দর্য্যর পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর