ওসি প্রদীপের দাপট থেকে রক্ষা পায়নি মুরগির খামারও

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যা মামলায় কারাগারে যাওয়া টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাস প্রায় ২ বছর আগে টেকনাফ থানায় যোগ দেওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইয়াবা কারবারিদের নির্মূল করবেন।

এটা তার শপথ ছিল। ইয়াবা বড়ির আগ্রাসনকে তিনি ‘ইয়াবা সন্ত্রাস’ হিসেবেও অভিহিত করেন। সেই ওসি প্রদীপ ইয়াবা সন্ত্রাস নির্মূলের নামে নিজেই নতুন সন্ত্রাসের পথ তৈরি করেন। তার নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে গত এক থেকে দেড় বছরে টেকনাফে দেড় শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এমনকি গাড়িতেও হামলা হয়। তার এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি কক্সবাজারের টেকনাফের মুরগির খামারও।

গত ৪ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফ মহেষখালিয়া পাড়া এলাকায় একটি মুরগির খামারে হামলা চালিয়ে খামারের মুরগি ও ডিম লুট করা হয়। এ সময় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় খামার মালিকের বাড়িতে। দাবি করা ঘুষের টাকা না পেয়ে এমন কা- ঘটায় ওসির নিয়ন্ত্রণাধীন টেকনাফ থানার বিশেষ টিম।

গতকাল সোমবার বিকালে এ ব্যাপারে মুখ খোলেন ভুক্তভোগী ওই মুরগির খামার মালিক নজির আহমদ। তিনি টেকনাফের মহেষখালিয়া পাড়ার বাসিন্দা। তিনি জানান, গত ৪ জুলাই ওসি প্রদীপের নির্দেশে পুলিশের একটি দল রাতে তার বাড়িতে এসে দরজা খুলতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ পরের দিন এসে ঘর ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতেও মন গলেনি ঘর থেকে বের করে তার স্ত্রীকেও মারধর করে গুলি চালিয়ে চলে যায়। এ সময় পাশের ঘরে থাকা তার বৃদ্ধ মা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

নজির আহমেদ আরও বলেন, এলাকার চৌকিদারের মাধ্যমে তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় পরের দিন ওসি দলবল নিয়ে তিন বন্ধুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুরগির খামারে হামলা চালায়। এতে খামারে থাকা ৩ হাজার মুরগি ও ১২ হাজার পিস ডিম লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় খামারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে খামারটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জীবন্ত পুড়ে মারা যায় মুরগি। শুধু তাই নয়, মিথ্যা মামলায়ও আসামি করা হয় নজির আহমেদকে।

নজির আহমেদের ভাষায়, লোনের মাধ্যমে এ খামার করতে গিয়ে আমরা ১০ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়েছি। জানি না এ লোকসান কীভাবে পুষিয়ে নিতে পারব। পুলিশ এ এলাকার অনেক লোকজনের কাছ থেকে ঘুষবাণিজ্যে করেছেন। স্থানীয়দের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাবেন। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এসব ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

স্থানীয় সৈয়দুল আলম বলেন, ‘রাতে পুলিশের একটি দল এসে নজির আহমদের ঘরে গুলি চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় ঘরে থাকা লোকজনকে মারধর করেন। ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট চালায়। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ঘুষবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল। যা এলাকার অনেক লোকজন ভুক্তভোগী। ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব ভুক্তভোগী মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

কেএস/বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর