পরিবারের ৮ জন করোনা আক্রান্ত: “আমি এতিম হয়ে যাচ্ছি না তো”

করোনা পরিস্থিতিতে এলো পবিত্র ঈদ উল আযহা। যখন সবাই ঈদের আনন্দ করছে তখন কেউ কেউ যুদ্ধ করছে মহামারী করোনা ভাইরাস এর সাথে। তেমনই একজন লালমনিরহাটের তরুনী নিশাত রিদওয়ানা সেঁজুতি। সে জানালো তার ঈদে তার অনূভুতি।

“মা অসুস্থ ছিলো বেশ কয়েকদিন থেকেই কিন্তু কখনোই আমাদের বুঝতে দেয়নি এতটা অসুস্থ। শুরু থেকেই পরিবারের সদস্য সহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীরাই বারবার বলেছেন করোনার সময় যাতে আমরা বাসায়ই থাকি। আসলে দায়িত্ব আদর্শ বারবার আমাদের কড়া দিয়েছে।

আমার বাবা জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামিলীগ এর সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান করোনার শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে নিরলস ভাবে।আমার মা ফেরদৌসী বেগম বিউটি বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী তিনিও এর ব্যতিক্রম নয়।এরপর আমি জেলা ছাত্রলীগ এর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় মাঠে ঘাটে ছুটে বেড়িয়েছি।

সবার মুখে হাসি ফোটাতে কখন যে ভয়ংকর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি পরিবার সহ বুঝতেই পারিনি। মা যখন প্রচন্ড অসুস্থ মাথায় তখন বাজ ভেঙে পড়লো, অক্সিমিটার মেশিনে দেখি মা এর অক্সিজেন সিচুয়েশন কম। তারপর হাসপাতাল ক্লিনিক করতে করতে করোনা পজিটিভ। মাটি সরে যাচ্ছিলো আমার পায়ের নিচ থেকে,দিন যত যাচ্ছে মা এর অবস্থা ততই খারাপ এরদিকে যাচ্ছে এরপর তাকে রংপুরে আইসোলেশনে রেখে আমরা সময় গুণছি। এরকম করতে করতেই বাবাসহ পরিবারের আরো চারজনের পজিটিভ। তখন মনে হচ্ছিলো সব বুঝি আমার শেষ। আমি এতিম হয়ে যাচ্ছিনা তো। সাথে সাথেই বাবাকেও রংপুরে পাঠানো হলো।২ দিন পর ঈদ। এই প্রথম আমার জীবনে ঈদ বলতে কিছু নেই।

ঈদের আগের দিন রেজাল্টে আমিসহ আমার পরিবারের আরো ৮ জন পজিটিভ৷ এবার আর অবাক হইনি। দিন গুণছিলাম কবে বাবা মা কে দেখবো। জীবনের প্রথম ঈদ বাবা মা কে ছাড়া। বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। পাগলের মত হয়ে যাচ্ছি।ঈদের দিন উঠেই হালকা রান্না করে ভালোবাসা সহ পাঠিয়ে দিলাম রংপুরে বাবা-মার জন্য। যে বাসায় হাজার লোকের সমাগম থাকতো সেই বাসায় জনশূন্য ঈদ। হাহাকার করছিলো সব।

ঈদের পরের দিন সকালে উঠেই অনুভব করছি আমার প্রচন্ড গলা ব্যাথা। কাশি ১ ঘন্টা যাবত থামছেনা, আমার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো তারপর আমিও চলে গেলাম রংপুরের কোভিড হাসপাতালে। দীর্ঘ অনেক দিন পর বাবা-মার সাথে দেখা অন্য এক জগতে। যেখানে মানুষ মারা গেলেও কান্নার শব্দ পাওয়া যায়না।

সবাই অসহায়ের মত করোনা পজিটিভ হয়ে আসছে ভর্তি হচ্ছে। ডাক্তার নার্স সবাই পিপিই পরে কাজ করেই যাচ্ছে। সবকিছু অসহায় তবুও ভালো লাগছিলো এই ভেবে বাবা মা পাশে আছে।

হাসপাতালে ৪ দিন থাকার পর দ্বিতীয় পরীক্ষায় আমার করোনা নেগেটিভ আসলো এটা জানার পর আনন্দের থেকে কষ্ট হচ্ছিলো বেশি।আবার আমার বাবা-মাকে ছেড়ে আসতে হবে। মেয়েরা বরাবরই বাবা আদুরে হয় আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমার বাবা আমার পৃথিবী। করোনা নেগেটিভ আসায় হাসপাতাল থেকে আমাকে ছাড়পত্র দিলো।বুক ফেটে কান্না আসছে। আসার সময় অনেক কেদেছি। সৃষ্টিকর্তা এরকম কষ্ট যেনো আর কাউকে না দেয়।

এখন দিন গুনছি, সময় দেখছি বারবার বাবা-মা ফিরে আসার প্রতীক্ষায়।সময়টাও বড্ড বেমানান, স্বার্থপর কাটতেই চায়না। এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে জানিনা। পরিবারসহ যখন জিতবো তখনই মনের সব রং ফিরে আসবে।আমি ও আমার পরিবার দোয়াপ্রার্থী সকলের কাছে।”

পরিবারকে কাছে পেতে এখন দিনগুনছে তরুনী সেঁজুতি। করোনাকালীন একাধিক পরিবারের পাশে দাড়ানো পরিবারটিই এখন যুদ্ধ করছে মহামারী করোনা ভাইরাস এর সাথে।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর