আবহাওয়া অধিদপ্তরের কম্পিউটারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র কেনায় সীমাহীন দুর্নীতি!

আবহাওয়া অধিদপপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের কম্পিউটার মেশিনারিজসহ অন্যান্য আসবাবপত্র কেনাকাটায় সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি হাইপারফর্মেন্স কম্পিউটার সিস্টেম অর্থাৎ পিসি ক্লেষ্টার থাকা সত্ত্বেও পরিচালক নিজস্ব চাহিদায় রাজস্ব খাত হতে ৪ গুণবেশী টাকা খরচ করে একই কোটেশনে আরো একটি কম্পিউটার ক্লেষ্টার ক্রয় করেন। পাশাপাশি অধিদপ্তরের একটি ভবনের আসবাবপত্র ক্রয়েও সীমাহীন অর্থ খরচ করেন।

ছবি: বার্তা বাজার।

পরিচালকের এহেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অধিদপ্তরের অপরাপর কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে ৩ কোটি টাকার মেশিনারিজ ১০ কোটি টাকায় কেনা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি কোন দুর্র্নীতিই খুজে পায়নি বলে জানান এক অভিযোগকারী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবহাওয়ার অপারেশনাল পূর্বাভাস নির্ণয়ের কাজে জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষের দিকে পরিচালক অবসরে যাওয়ার শেষ মুহুর্তে সহকারী পরিচালক সাদেকুল আলম স্বাক্ষরিত স্পেসিফিকেশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের মাধ্যমে লোকাল টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মাজ্জাক ইন্টার ট্রেডের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকায় একটি হাইপারফরমেন্স কম্পিউটার বা পিসি ক্লোষ্টার ক্রয় করেন নতুন পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। এই ক্রয় প্রক্রিয়া অর্থ লোপাটের তেমন সুযোগ না থাকায় উক্ত পিসি ক্লোষ্টারটি সরবরাহকারীর পক্ষে এক্সপার্টের অভাব দেখিয়ে প্রয়োজনীয় কনফিগার করে চালু করেনি উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান।

কিন্তু পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ এই পিসি ক্লোষ্টারটি অধিদপ্তরের লাল দালানে ফেলে রেখে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত একই স্পেসিফিকেশনের মাধ্যমে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করে রাজস্ব খাত থেকে আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩ গুণবেশী দামে অর্থাৎ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি পিসি ক্লোষ্টার ক্রয় করেন।

এই পিসি ক্লোষ্টারটি কনফিগার করার পর ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল না পাওয়ার কারনে দুই দফায় আরো সাড়ে ৩ কোটি খরচ করে এটাকে পুর্ন:মেরামত করেন। কিন্তু এই পিসি ক্লেষ্টার বাবদ অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সাড়ে ১৩ কোট টাকা ব্যয় হলেও এটা কোন কাজে আসছেনা বিধায় এখনো এটা অকেজো হয়ে পড়ে আছে অধিদপ্তরের লাল দালানে। তবে এটা আবারো মেরামত করার জন্য আরো ২ কোটি টাকা বরাদ্দের পায়তারা চালিয়ে আসছে পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।

সুত্র জানায়, অধিদপ্তরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও প্রশাসনিকভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়াই পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ তার নিজস্ব উদ্যোগে একটি জাল জালিয়াতিমুলক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত পিসি ক্লোষ্টারটি ক্রয় করেন। বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞাপন প্রচার না করে সীমিত প্রচারিত কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় তা প্রকাশ করলেও সিপিটিইউ এর ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করেননি।

পরিচালক তার নিজের পছন্দের ‘মেসার্স আদাসা’ কোম্পানীকে কাজ দেয়ার জন্য পিসি ক্লোষ্টারটির কারিগরী স্পেসিফিকেশনসহ দরপত্রের যাবতীয় শর্তাবলী ঐ কোম্পানীর দ্বারা প্রস্তুত করে দরপত্র সিডিউল তৈরি করে আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করেন। এতে ৫টি কোম্পানীর দরপত্র জমা পড়লে মেসার্স আদাসা কোম্পানীকেই নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড প্রদান করেন পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।

অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মুল বরাদ্দের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমদরে সর্বনিম্ন দরদাতার সিডিউিল জমা দেয়ার নিয়ম থাকে। কিন্তু কেউ যদি ২০/৩০ শতাংশ কমরেটে সিডিউল জমা দেয় তাহলে তার সিডিউল বাতিল বলে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে মেসার্স আদাসা কোম্পানীকে নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড দেয়ার কারন হলো পরিচালক সামছুদ্দিন আগে থেকেই পিসি ক্লোষ্টার ক্রয়ের জন্য সুনিদিষ্ট অর্থ নির্ধারণ করে রেখে ছিলেন।

এদিকে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি উক্ত কাজের জন্য বেশ কয়েকটি পয়েন্টে আপত্তি অর্থাৎ “নোট অব ডিসেন্ট” দেয়া সত্ত্বেও এটাকে তোয়াক্কা না করেই মেসার্স আদাসা কোম্পানীকে নোটিফিকেশন এওয়ার্ড দেয়া হয়। এতে সরকারের অন্তত ৫ কোটি টাকার অপচয় হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের সিভিল অডিট চলাকালে পিসি ক্লোষ্টার ফাইলে অডিট আপত্তি দেয়া হলে অডিট টিমের সাথে সমঝোতা করেন এবং মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করে ফাইলটি পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ ওই ফাইলটি বের করা হলেই দুর্নীতির কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।

পিসি ক্লোষ্টারটি ক্রয়ে চরম দুর্নীতির পাশাপাশি এর বৈদেশিক প্রশিক্ষনেও গুরুতর দুর্নীতি ও প্রতারনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের পত্র নং প্রমো/১প্রশি-৫/২০০৭/ডি-৪/৩২৬, তারিখ-০৭/১২/২০১৭ এবং ২৩.০০.০০০০.২৫.১১.১৮.৩৪, তারিখ-২৭/০১/২০১৯ এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমান।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় ১মপত্রে ৬জন কর্মকর্তার স্পেনের বার্সেলোনায় ১৯ ফেব্রুয়ারী -২০১৮ হতে ০২ মার্চ-২০১৮ পর্যন্ত ১২ দিন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য জিও জারী করে। যেখানে যাবতীয় ব্যয়ভার পিসি ক্লোষ্টার সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাসা কোম্পানীকেই বহন করতে হবে। কিন্তু পিসি ক্লোষ্টারটি সরবরাহে জটিলতার কারনে যথাসময়ে প্রশিক্ষন না হওয়ায় দীর্ঘ ১ বছর পর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ পূর্বে জিও‘র তথ্য গোপন করে একই কর্মকর্তাদের নামে ১৭-২২ ফেব্রুয়ারী-২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ৬ দিনের বৈদেশিক প্রশিক্ষনের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব প্রেরন করে এবং মন্ত্রনালয় নতুন জিও জারী করে পূর্বের আদেশটি বাতিল করেন। ফলে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়।

এতে অধিদপ্তরের রাজস্ব খাত থেকেই অন্তত কোটি টাকা অপচয় হয়। তবে শোনা যাচ্ছে মেসার্স আদাসা কোম্পানীর নিকট থেকে পরিচালক সামছুদ্দিন এই প্রশিক্ষণ বাবদ পুরো টাকাটাই হাতিয়ে নিয়েছেন।

এব্যাপারে পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদের বক্তব্য জানার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের অফিসে তার কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

বার্তাবাজার/রানা/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর