বেরোবিতে উপাচার্যর ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ব্যহত প্রশাসনিক কর্মকান্ড

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একজন উপ-উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও গত দশ বছরে ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিজেও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না।

তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের আগে থেকেই ট্রেজারারের পদটি শুন্য রয়েছে। সেই পদ পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ না করে নিজেই ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য শিক্ষক থাকার পরও ট্রেজারারসহ অন্তত ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য নিজেই ট্রেজারার পদটি ধরে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদেও কাউকে নিয়োগ না দিয়ে বছরের পর বছর পার করছেন। তিনি নিজেই এই পদের দায়িত্বে থেকে অতি গোপনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক লাভজনক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে তার নামে দুইটি ট্রেড লাইসেন্স করেছেন।

এছাড়া, তিনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও পালন করছেন। যদিও এসব অনুষদ ও বিভাগের দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় মসজিদের সভাপতিসহ এমন বেশ কিছু পদে দায়িত্ব ধরে আছেন।

এর আগে তিনি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, সাইবার সেন্টারের পরিচালক, ই-লার্নিং সেন্টারের পরিচালকসহ বেশ কিছু দায়িত্বে ছিলেন। আন্দোলন ও দাবির মূখে কিছু দায়িত্ব ছাড়তে ছেড়ে দেন তিনি।

এদিকে, এতসব দায়িত্ব নিয়ে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থাকছেন উপাচার্য। এতে, চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে প্রশাসনিক কর্মকান্ড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যোগদানের পর ৬২৫ কাযর্দিবসের মধ্যে মাত্র ১৬০ দিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

শিক্ষকরা জানান, উপাচার্য একাই অনেকগুলো পদের দায়িত্ব পালন করেন। আবার তিনি বেশ কিছু বিভাগে ক্লাসও নেন। কিন্তু তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকায় একদিকে যেমন প্রশাসনিক কর্মকান্ড ব্যহত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে একাডেমিক কার্যক্রমও বিপর্যস্ত হচ্ছে। তারা জানান, উপাচার্য নিয়মিত ক্লাস নিতে পারেন না। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য ডাকেন। তাঁর ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদ মন্ডল বলেন, তিনি ডিন হওয়ার কারনে পরীক্ষাসহ বেশ কিছু কাজ তাকে করতে হয়। কিন্তু, তিনি ঢাকায় থাকার কারনে অনেক কাজে বিঘ্ন ঘটে। তিনি আরও বলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম ব্যাচের মাস্টার্সের সকল প্রক্রিয়া শেষ হবার পর শুধুমাত্র উপাচার্যের স্বাক্ষরের কারনে নির্ধারিত সময়ের দুইমাস পর পরীক্ষা নিতে হয়েছে।

আসাদ মন্ডল আরও বলেন, উপাচার্য নতুন শিক্ষকদের ট্রেণিংয়ের নামে ব্যক্তিগত কাজে জড়িয়েছেন। নতুন শিক্ষকরা বিভাগগুলোতে আসতে পারছেন না।তাই বিভাগগুলো চাপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, অনুষদে বা বিভাগে যোগ্য ব্যক্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট পদে যোগ্যদেরই দায়িত্ব প্রদান করা দরকার।

এবিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর নাজমুজ আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর