এমপিওভুক্তি হচ্ছে নতুন আরও ১৭৯৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আগামী জুনে এক হাজার ৭৯৬টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আওতায় আসছে। এজন্য অর্থ বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত বছরের আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় সাড়ে সাত হাজার (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) আবেদনের মধ্যে এক হাজার ৭৯৬টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত হয়েছে।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আগামী অর্থবছরে এক হাজার ২৮ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহম্মেদ বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী এক হাজার ৭৯৬টি প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) প্রথম ধাপে এমপিওভুক্তি করা হতে পারে।

তিনি জানান, এমপিওভুক্তির জন্য আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী (শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি) সৌদি আরবে ওমরা হজ শেষে দেশে ফিরলে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। এটি জুনের শেষে দিকে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

সূত্র জানায়, আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থী-সংক্রান্ত তথ্য, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার, অবকাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নম্বর দেয়া হয়। এসব শর্ত বিবেচনায় সারাদেশের সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ প্রায় ১২শ’, মাদরাসা ৫শ’ এবং সাড়ে ৩শ’ কারিগরি প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তারা জানান, এমপিও পায় না এমন সাধারণ স্কুল ও কলেজ আছে সারাদেশে সাত হাজার ১৪২টি। তবে এমপিওর জন্য অনলাইনে আবেদন করেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মাউশির এক হিসাবে দেখা গেছে, সাত হাজার ১৪২টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো মাউশির আরেক হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে লাগে ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা; উচ্চমাধ্যমিক কলেজে ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৩ লাখ ৮০ হাজার, আর নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাগে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসাগুলোতে সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদরাসা সাত হাজার ৬১৮টি। এ খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এ ব্যয় বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিলে বছরে অন্তত আরও তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি ও সরকারিকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত চার হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘আমরা আশা করি, জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার অনুযায়ী সরকার দ্রুত আমাদের সকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করবে। নতুন বাজেটে এ জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত আমরা শুধু বারবার আশ্বাসই পেয়েছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। এ জন্য আমরা হতাশ।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। তখনই অনেক প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। পরবর্তীতে এমপিওভুক্তির জন্য নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর