প্রতারণার হিংস্র ছোবলে সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

চারদিকে একটি কথাই ভেসে বেড়াচ্ছে। সেটা হচ্ছে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা। প্রতারণা কি? প্রতারণা হচ্ছে অসদুপায় অবলম্বন করে খারাপ পথে কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমান দেশের পারিবারিক, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন হয়ে গেছে, ইচ্ছা করলেই একে অপরের সাথে খুব সহজেই প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্র ক্রমই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা এখন বড় ধরনের অপরাধ। এতে যেমন পরিবার ও সমাজে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, তেমনি একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে।

এই সমাজে নীতি ও আদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত কঠিন। অসৎ ও অবৈধ উপায়ে উপর্জন সামাজকে অঙ্গহীন করে দেয়। দেশের সবাই যদি বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হতে চায় তাহলে এটা দেশের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা। এটা মনে রাখতে হবে, সাহেদ-সাবরিনা, আরিফরা সমাজে দুই-একজন নয়, ওদের মতো অনেক আছে। এরা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ পরে প্রতারণা করে যাচ্ছে। কেউ আড়ালে প্রতারণা করে আবার কেউ প্রকাশ্যে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। এরা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। দেশের স্বার্থে এদের প্রতিহত করতে হবে।

আমরা নিজেদের এই অধঃপতনের স্থানে কীভাবে নিয়ে আসলাম? এটা একদিন বা দুদিনে গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে মোহগ্রস্ত করা হয়। ক্ষমতা, পোশাকের বাহর, টাকার জাদু, কথার বাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণা করে প্রতারকরা। এরা বিভিন্ন নাম ও পেশার পরিচয় দিয়ে থাকে। মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে তাদের। এর সমাজে জনদরদী হিসেবে পরিচিত। সমাজের মানুষ তাদের খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে। আর এ বিশ্বাসের কারণে সমাজের অসহায় মানুষগুলো প্রতারণার শিকার হয়। বিগত দিনে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ার নাম দুটি সবার কাছে পরিচিত। যেখানে মহামারী করোনার পরীক্ষা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করে হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ, চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় সহ বিভিন্ন অভিযোগ। সাবরিনা একজন চিকিৎসক হয়েও এমন অপরাধ এর দ্বারা মানা যায়না।

কথায় আছে ক্ষমতা পেলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। তারা সবসময় মত্ত থাকে কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। ছোট ক্ষমতাগুলো যেমন ছোট অপরাধের জন্ম দেয়, তেমনি বড় ক্ষমতাগুলো বড় বড় অপারাধের জন্ম দেয়। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য অসৎ উপায়ে প্রতারণা করা ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলা। তাদের সমস্ত সুখ যেন এখানেই।

দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিন দলের নাম ভাঙিয়ে ধাপে ধাপে উপারে উঠে যাচ্ছে। অসহায় মানুষদের নির্যাতন করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তারা। আবার সেভাবেই তাদের পতন হচ্ছে। দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তারা বড় হচ্ছে। এরা ধরা পড়ে, ধরা পড়ে না যারা তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে।

মানুষ দুইভাবে প্রতারণা করে। কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে আবার কেউ পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে। লোভের বশবর্তী হয়ে অনেক টাকার মালিক ও ক্ষমতাসীন হতে হবে এই স্বপ্ন তাকে বিভোর করে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তি ভয়ঙ্কর প্রতারণা ও অমানবিকতার আশ্রয় নেয়। এই লোভের পরিণতি কি হতে পারে একবার ভেবে দেখে না। কেউ করে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা, কেউ করে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, কেউ করে অনলাইনে পন্য বিক্রির নামে প্রতারণা, এভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। এদের যে কোন উপায়ে প্রতিহত করতে হবে। তা নাহলে সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটবে।

মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে খেলাটা বড় অপরাধ। এই মানুষ নামের অমানুষ গুলোর জন্য সমাজের আজ এই করুন অবস্থা। তাদের কাজ সবসময় বিবেকহীন হয়। প্রতারণার হিংস্র ছোবলে সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!

করোনাভাইরাস মানুষকে বদলে দিবে এমন প্রত্যাশা ছিলো সবার মনে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার ভিন্ন চিত্র। এসব দেখে আহত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠনের কাজ দেখলে মনে হয় মানবিকতা অনেক আগেই বিলিন হয়ে গেছে। তেমনি সাহেদ, সাবরিনারা মানবতা বিক্রি করে সমাজকে কলঙ্কিত করেছে। অপমান করেছে নিজের মাতৃভূমিকে। আসলে মানুষ মানবিকতাকে ধারণ করতে পারেনি। পারেনি নিজে সৎ পথে চলা শিখতে।

সাহেদ করিম, সাবরিনার মতো হাজারো দুর্নীতিবাজ সমাজে দাপটের সাথে দাপিয়ে বেরাচ্ছে। এদেরকে মুছে ফেলা সহজ নয়। কারণ ক্ষমতাবান ও লোভীদের পথ অনেক শক্তিশালী হয়। করোনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দেয়া মানে মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা করা। করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়া- একটি বড় ধরনের অপরাধ। এর ফলে বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এই প্রতারণার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

লেখকঃ কাফিল আহমেদ
সংবাদকর্মী, বার্তাবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর