ফ্রান্সে যে কারণে বাংলাদেশিদের সংসার ভাঙছে

বর্তমানে দেশে বিদেশে সংসার ভাঙার আরেক কারণ পরকিয়া। পশ্চিমা বিশ্বের মত বাঙালীদের কাছেও পরকিয়া এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এ পরকিয়া যখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসেও শুরু করে তখন সমাজ পরিবার কোথাও শান্তি নেই। একদিকে হাজারো কষ্টের বিনিময়ে ইউরোপে স্যাটেল হয়ে কেউ দেশ থেকে বউ এনে সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখে, আর অন্যদিকে কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকে কবে সে সুখের সংসারে সর্বনাশ ঘটাবে।

প্যারিসে কেন এত পরকিয়া হয়? কেন একটা মেয়ে দেশ থেকে আসতে না আসতেই নিজের বাচ্ছা, স্বামী ছেড়ে অন্যজনের সাথে চলে যায়?

আমরা বাঙালিদের জীবনে সামাজিক সংস্কৃতি রক্তের সাথে মিশে আছে। আর যেখানেই যাই না কেন আমরা সে সংস্কৃতি পালন করি। তবে সংস্কৃতি পালন করতে গিয়ে আমরা জড়িয়ে যাচ্ছি যতসব অপসংস্কৃতিতে। আমরা অনেক সময় নিজের অনেক বন্ধু নিয়ে ঘরের ভিতর চা কফির আড্ডা ,তাস খেলা, কমিউনিটি বিষয়ক আড্ডা, এমনকি নেশাদ্রব্য জাতীয় পানীয় নিজের ঘরে করে থাকি। আমরা ভুলে যাই আমাদের সংসারের ঘর একটি আমাদের কাছে মসজিদের মত, কিন্তু সে ঘরে নেশা করে, তাস খেলে ঘরকে করছি অপবিত্র। আমরা ভুলে যাই, আমাদের ঘরে যে বউ বাচ্ছা রয়েছে।

অনেক লোক নিজের সকল দুর্বলতা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে দেয় নিজের স্ত্রীর কাছে, যেমন ধরুন সরকারি কত ভাতা আসে, বাচ্চা বাবদ কত টাকা আসে, স্ত্রী বাবদ কত টাকা সরকারি থেকে ভাতা আসে ইত্যাদি সকল সুযোগ-সুবিধার কথা খুব যত্নসহকারে বউ এর কাছে বলে। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্যারিসের সমাজ এই ব্যাপার গুলো ভালো সম্পর্ক থাকতে দেয় না। অনেক দুষ্ট লোক আছে আপনার অজান্তে আপনার স্ত্রীকে অনেক কানপড়া এবং টাকার অংশীদারির কথা আপনার স্ত্রীকে কুপরামর্শ দিয়ে থাকে।

 

ফ্রান্সের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার

আপনি একটি স্বামী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যা বেতন পান পরিবারের বাসস্থান খরচ এবং স্ত্রীর যাবতীয় সাধ্যমত চাহিদা সহ বাচ্চাকাচ্চা খরচ সার্বিক ক্ষেত্রে দিতে , আপনি আপনার জীবন উজাড় করে দেন। সব সময় পরিবারের সকল চাহিদা মিটে নিজের কথা চিন্তা করেন। একটি স্বামী তার দুর্বলতা কারনে স্ত্রীর কাছে দিনের পর দিন অনেক ব্ল্যাকমেল হতে থাকেন। যেমন ধরুন একটি স্বামী তার পরিবারের পিতা-মাতাকে অথবা তার ভাই-বোনকে খরচ না পাঠিয়ে। স্ত্রীকে ভয় পেয়ে স্ত্রীর পিতামাতা এবং ভাই-বোনসহ চৌদ্দগুষ্টির চাহিদা মেটাতে সার্বক্ষনিক আপনি ব্যস্ত। কারণ আপনার ভিতরে ভয় স্ত্রীর চাহিদা মত তার পরিবারের চাহিদা না মেটালে আপনার দাম্পত্য জীবনে আসবে কঠিন কোলাহল। আর আপনার এ দুর্বলতাই আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বউ সে সুযোগে অন্যজনের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে যায়৷

আর সবচেয়ে বড় যে ভুলটি হয়, ইউরোপে আপনি আসেন খুবই যৌবনকালে, ফ্রান্সের সিস্টেম অনুযায়ী কাগজ পেতে পেতে আপনার সেই যৌবন চল্লিশে পাড়া দেয়, কিন্তু আপনি আপনার মনের তৃষ্ণায় অথবা পরিবারের পছন্দে আপনি বিয়ে করেন ২০ বছরের একটি ছোট্ট কিশোরী মেয়েকে। পরে সে মেয়ের সাথে
শারিরীক চাহিদা পূরণ হলেও মনের চাহিদা মিলেনা। যার ফলে মেয়ে অন্য কোন সুন্দর ছেলে পেলে পরকিয়ায় জড়িয়ে যায়।

বউকে ব্যক্তি স্বাধীনতা দিয়ে অলসতার কারণে কখনোই খবর নেন না, আপনার স্ত্রী কার সাথে কখন কোথায় কথা বলছে, কার সাথে চলাফেরা করছে, কোথায় আড্ডা দিচ্ছে কোথায় পার্টিতে যাচ্ছে এবং কোথায় বিভিন্ন সমাবেশ সমিতিতে সংযুক্ত হচ্ছে।

কর্ম ক্ষেত্রে অথবা আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক মন্দার কারণে, অথবা কর্মস্থানে বিভিন্ন ঝামেলা ঝগড়াঝাঁটি ইত্যাদি কারণে আপনার মাথা যখন সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়। সারাদিন আপনি যখন বাইরে থাকেন আপনার স্ত্রী আপনার জন্য অনেক অপেক্ষা করে, আপনার মুখে একটু হাসি মুখে কথা শুনবে। আপনার সাথে সুখ-দুঃখে ভালোবাসার কিছু আলাপ করবে।

 

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত জগদ্বিখ্যাত লুভর মিউজিয়াম

 

বাহিরের যত ঝামেলার কারণে আপনার মন মেজাজ খারাপ থাকার সকল রাগ আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে দেখাতে থাকেন দিনের পর দিন। অনেক ভালোবাসা ঘাটতি চলে আসে স্বামী স্ত্রীর ভিতরে। পারিবারিক কোলাহল নিয়ে যখন আপনারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ঝগড়া করেন, স্বামীর খবর থাকে না যে তার স্ত্রী চোখের জল মোছার জন্য অনেক নায়ক প্যারিসে বসে আছে। মানে আপনার সাথে ঝগড়াঝাঁটি নানান খারাপ ব্যবহার ইত্যাদি কথাকাটাকাটি হবার পর যখন আপনি বাহিরে থাকেন। ঠিক তখনই আপনার স্ত্রীকে সে নায়ক গুলো দিনের-পর-দিন বিভিন্ন এসএমএস এবং কল করে। সেই প্রতারক লোক গুলো এই সুযোগটাই তখন কাজে লাগায় এবং আপনার স্ত্রীকে আপনার থেকে অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে।

প্যারিসের সমাজে যখন এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনাগুলো জন্ম হয়, তখন আমাদের প্যারিসে সকল বাংলাদেশিরা চুপচাপ বসে থাকেন। সামাজিকভাবে এর কোন প্রতিকার চেষ্টা কখনোই কেউ চালান না অথবা উদ্যোগ নেন নি। যার কারণে তাদের চোখের সামনে অতীতে অনেকে এরকম অন্যের বউ নিয়ে তিন চার মাস অবৈধভাবে মেলামেশা করে, তাদের নাকের উপর দিয়ে প্যারিসে চলাচল করে এবং পরবর্তীতে আবার আরেক দান্ধার জন্য তারা বসে থাকে।

আবার প্যারিসের সবচেয়ে জঘন্যতম ইতিহাস কিছু পুরুষ আছে তাদের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। কিন্তু নারীরা হাত তোলা পছন্দ করেনা। তাই যখন স্বামীরা শারিরীক অত্যাচার করে তখন অন্যদিক থেকে আসে প্রেম ভালবাসা। এইবার বউ সে প্রেম ভালবাসায় আসক্ত হয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যায়।

অনেক লোক আছেন শুধু টাকা ক্ষেত্রে এবং কর্ম ক্ষেত্রে দিনের পর দিন শুধু টাকার পিছনে দৌড়াচ্ছেন। কখনো স্ত্রীকে ঠিকমতো সময় দেয় না তারা। পরে বউ সময় কাটানোর জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নেয়।

প্যারিসে যারা এ ধরনের কুকর্ম করেন, অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, একটি বার চিন্তা করতে পারেন একজন মানুষ তার পরিবার স্ত্রী কে ফ্রান্সে আনতে বছরের পর বছর কত অপেক্ষা এবং কত কষ্ট করতে হয়?

যারা অন্যের স্ত্রীকে ভালোবাসার কথা বলে ভাগিয়ে নিয়ে যায়,তাদের কি ক্ষমতা হবে সেই স্ত্রীকে বাংলাদেশ থেকে পুনরায় এই ফ্রান্সে তাদের স্ত্রী করে নিয়ে আসতে? যখন এই প্রশ্নগুলো করা হবে সেই প্রতারক গুলোকে, তখনই তাদের ভালোবাসা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সমাজের সকলের নীরবতায় আজ এই ধরণের কু কর্ম লোকজন দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে। দূষিত হচ্ছে আমাদের সমাজ।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর