হুমায়ুন আহমেদকে খোলা চিঠি

কেমন আছেন স্যার? আমি আছি একমত৷ আজ থেকে ৮ বছর আগে যেদিন আপনার মৃত্যুর সংবাদ শোনেছিলাম, তখনও আমার হাতে আপনার সৃষ্টি ‘সবাই গেছে বনে’ বইটা ছিল৷ আশে পাশে আরও কতগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল৷

আমার একটা গোপন নাম আছে। এটা শুধু আমিই জানি। নামটা আমিই রেখেছি। আপনার তৈরী হিমু অথবা মিসির আলী না। অন্য কিছু একটা রেখেছি। আপনার বই পড়ার সময় ভাবতাম ‘হিমু’ হয়ে যাব। আবার ভাবতাম ‘নাহ মিসির আলীই হব’৷ কিন্তু আর হয়ে উঠা হয়নি। আপনি মেয়েদের প্রতি খুব সদয় হয়ে লেখালেখি করেছেন। যেমন নীল শাড়ী পড়লেই মেয়েরা রূপা হয়ে যায়৷ কিন্তু হলুদ পাঞ্জাবী পড়লেই হিমু হতে পারে না৷ আত্মায় হিমুর জন্ম দিতে হয়।

আপনাকে অনেক মিস করি স্যার। অনেক মনে পরে আপনার কথা৷ আপনার জন্য মিস করি নাকি আপনার বইয়ের জন্য মিস করি তা সঠিক জানিনা। তবে আপনাকে লাস্টবার দেখেছিলাম ছাই রংয়ের একটা প্যান্ট পড়া অবস্থায়। আমার দুইটা প্যান্ট আছে আপনার প্যান্টের কালারের। অদ্ভুদ মিল না স্যার? কালো শার্টও আছে একটা।

একটা সময় বইয়ের পোকা ছিলাম। এমনও হত আগামীকাল আমার রসায়ন পরীক্ষা আর আজ রাতে আমি রসায়ন বইয়ের উপর লাইব্রেরি থেকে আনা বই রেখে পড়তাম।। আম্মা আসলে পেজ উল্টিয়ে ফেলতাম! আমার কাছে তখন লেখক মানেই আপনি। এখন আর বইটই তেমন পড়া হয়না। আমাদের স্থানীয় গনকেন্দ্র পাঠাগারে আপনার লেখা যত বই ছিল সব বই পড়ে শেষ করে হা করে তাকিয়ে থাকতাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ির আশায়।

জানেন স্যার, ক্লাস ফোরে পড়ার সময় আপনার একটা বই পড়েছিলাম “এলাটিং বেলাটিং”। বর্তমানে তারুন্যের প্রিয় চরিত্র হিমু, তারপরে মিসির আলী, শুভ্র। আপনি কি এক উন্মাদনায় মাতিয়ে গেলেন আমাদের! আপনাকে সামনা সামনি দেখার সৌভাগ্য আমার ২ বার হয়েছিল। আপনার গ্রামের বাড়ি আর আমার গ্রামের বাড়ি কিন্তু বেশি দুরে না। ৩ কি.মি. ফারাক। নান্দাইল রোডতো চিনেনই। আপনার প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের স্পোর্টস-এ আসতেন। সেই সুবাধেই কাছ থেকে আপনাকে দেখা। আপনি মহাপুরুষ কিনা জানিনা। কিন্তু মহাপুরুষের স্রষ্টাকে কাছ থেকে দেখাটাতো অবশ্যই ভাগ্যের ব্যাপার। আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন স্যার?

দৈনিক বাংলা পত্রিকার সহ-সম্পাদক সালেহ চৌধুরী আপনাকে বলেছিল, বাংলাদেশে পাঁচজন হুমায়ূন আছে। তারা হলেন- রাজনীতিবিদ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দৈনিক বাংলার সম্পাদক আহমেদ হুমায়ূন, অধ্যাপক এবং কবি হুমায়ূন আজাদ, অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি এবং তুমি।’ আজ আপনার কেউই নেই। কেন নেই স্যার? আর কয়টা বছর থেকে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?

শ্রাবণের কদম ফুলের কি এতই অভাব ছিল?

আপনাকে ভুলা যাবেনা। অন্তত ডিসেম্বরে খালি পায়ে গভীর রাতে হাঁটতে বের হওয়া ছেলেটা আপনাকে ভুলবেনা। একা একা আড়ালে বসে পূর্নিমাতে জোছনা গিলে খাওয়া ছেলেটা আপনাকে ভুলবেনা। ভুলবেনা গাছের সাথে কথা বলতে শেখা উদ্ভ্রান্ত এক যুবক।

পরম করুণাম আপনাকে ভাল রাখুক। ভাল থাকবেন স্যার।

ইতি,
নান্দাইল রোডের জুয়েল।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর