এলো পাট শাকের দুটি নতুন জাত

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সিটিটিউট (বিজেআরআই) কর্র্তৃক সদ্য অবমুক্তকৃত-বিজেআরআই দেশী পাটশাক-২ (ম্যাড়া লাল) ও বিজেআরআই দেশী পাটশাক-৩ (ম্যাড়া সবুজ) শাকের জগতে দু’টি নতুন জাত। স্বাদে তিতাহীন বলে এটি অধিক সুস্বাদু ও সুুমিষ্ট।

প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় মানুষের শাকের চাহিদা মেটানোর পাশপাশি পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহয়তা করবে-এমনটাই আশা ব্যক্ত করেন দীর্ঘ ৫ বছর ধরে গবেষণায় নিমগ্ন থাকা বিজ্ঞানী মোঃ জ্যাবলুল তারেক।

এ কাজে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন উক্ত প্রতিষ্টানের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, ড. মোঃ আইযুব খান, ড. মোঃ সামিউল হক এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আবুল ফজল মোল্লা, ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম। গবেষণালব্ধ উপাত্ত বিজেআরআই-এর প্রজনন বিভাগ কর্তৃক উপস্থাপনের মাধ্যমে জাত দু’টি পাটেরশাক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

গবেষক মোঃ জ্যাবলুল তারেক বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সিটিটিউটের বাস্তবায়নাধীন পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্পে চাকুরীর সুবাদে প্রায়ই বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে গবেষণা মাঠ পরিদর্শন কিংবা মাঠ দিবস সুসম্পন্ন করতে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সময় এক ধরনের বুনো পাট দেখতে পাই। এই বুনো পাট থেকে উন্নত মানের আঁশ পাওয়া যায় কিনা-সেটাই ছিল আমার গবেষণা লক্ষ্য।

দেখা গেল, বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই শাখা-প্রশাখায় ঝোপালো হয়ে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। ফলে এ জাত থেকে কোনো লাভজনক আঁশ পাওয়া সম্ভব হয় না। তবে উক্ত প্রকল্পের আওতায় শাক হিসেবে ব্যবহারের লক্ষে নতুন করে গবেষণা চলতে থাকে। অবশেষে ৩ বছর ধরে গবেষণার পর এটি তিতাহীন সুস্বাদু সুমিষ্টযুক্ত শাকের ন্যায় সকল পুষ্টিগুণ ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় অতি সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ম্যাড়া লাল ও ম্যাড়া সবুজ লাইন দু’টি শাকের জাত হিসেবে অনুমোদিত হয়।

তিনি শাক সম্পর্কে আরো বলেন, গধষাধপবধব পরিবাবের অন্তভুর্ক্ত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ঈড়ৎপযড়ৎঁং পধঢ়ংঁষধৎরং। পুষ্টিমান বিবেচনায় ম্যাড়া পাটশাক অন্যান্য পাটশাকের চেয়ে গড়ে প্রায় দেড়গুণ পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। অন্যান্য পাটশাকে যেখানে গড়ে ক্যালসিয়াম (১.৭৭%), পটাশিয়াম (১.৫৭%), আয়রন (১১৬৮.৫ মিলিগ্রাম/কেজি), প্রোটিন (২২.৭৫%), ভিটামিন-এ (১০৫.৭০ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম) এবং ভিটামিন-সি (৬৫.৭৯ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) সেখানে ম্যাড়া দু’টি জাত পাটশাকে গড়ে প্রায় দেড়গুণ ক্যালসিয়াম (২.১৫%), পটাশিয়াম (১.৬৪%), আয়রন (৭৯০.৫ মিলিগ্রাম/কেজি), প্রোটিন (২০.৫০%), ভিটামিন-এ (১২৬.৪৫ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম) এবং ভিটামিন-সি (৭৫.১৭ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম) বিদ্যমান। পুষ্টিমান ও অন্যান্য তথ্যসম্বলিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ ঞধুষড়ৎ ্ ঋৎধহপরং গ্রুপের আমেরিকান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঠবমবঃধনষব ঝপরবহপব’ এ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী দিনের আলো নিরপেক্ষ স্বল্প জীবনকাল উদ্ভিদ বলে এটি সব ধবনের জমিতে প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়। এমনকি এটি অল্পমাত্রার লবণাক্ত এলাকাতেও আবাদ করা যায়। পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয় বলে ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ঝোপালো এই শাকগাছ থেকে কয়েকবার শাকপাতা সংগ্রহ করা সম্ভব।

বীজ বপনের ২৫-৩৫ দিনের ভেতরেই শাকপাতা সংগ্রহ করা যায়, যার ফলন হেক্টরপ্রতি ৩-৪ টন। বুনোজাত থেকে বাছাইকৃত বলে বর্তমানে এ শাকে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান এবং পরিমান নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর