পেটের ক্ষুধা কোন নিয়ম মানে না!

ভালো আছি, কথাটা বলতে গেলেও কেন জানি আঁতকে উঠি। মহামারীর এই দিনে আপনি, আমি, আমরা কেউই ভালো নেই। ভালো থাকার কথাও না। একদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাস আরেক দিকে আর্থিক চিন্তা! সাধারণ জীবনযাপন করা যেন এক মহা ব্যাপার। মুক্ত আকাশে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেবারও যেন সুযোগ নেই। আর কতদিন ঘরবন্দী থাকবে মানুষ? এটাই হয়তো প্রকৃতির সাথে অবিচারের শাস্তি। পাল্টে যাওয়া বিশ্বের সব মানুষই এখন চরম বাস্তবতার সম্মুখীন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কম বেশি সকলের ঘরেই অভাব রয়েছে। অসুস্থ হওয়ার আশংকা নিয়েও কাজে যাচ্ছে মানুষ। কারন পেটের ক্ষুধা যে কোন নিয়ম মানে না! করোনায় মানুষ ভালো থাকার কথাটাই ভুলে গেছে। পাল্টে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থাও, আমরা নেই আর আগের নিয়মে। সবসময়ের সঙ্গী হয়ে থাকে কিছু সামগ্রী। যা নাহলে ঘরের বাইরে বের হওয়াই মুশকিল।

জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। বাড়ি ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য হারিয়ে বাধ্য হয়ে শহর ছাড়ছে অনেকেই। আশা ছিলো করোনাভাইরাস মানুষকে বদলে দিবে। মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করতে পাড়ছে না। মহামারীরকালেও থেমে নেই ধর্ষণের মতো অমানবিক ঘটনা। থেমে নেই মারামারি, হানাহানি, ঘুষ দুর্নীতি সমাজকে অস্থির করে তুলেছে। লুটেপুটে খাওয়ার কমতি নেই এই সমাজে। তাই ভালো থাকার আশ্বাস ক্রমশেই কমে যাচ্ছে।

দেশে নেই করোনার প্রকৃত চিত্র। প্রতিনিয়তই চেনা-পরিচিত স্বজনরা মারা যাচ্ছে। কারো মৃত্যু করোনায় আবার কারো অন্য কোনো রোগে। করোনার কারণে অন্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া প্রায় দুর্ভাগ্য। বিত্তশালীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। কিন্তু সাধারন মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মরলেও দেখার কেউ নেই। তাই মানুষ এখন মৃত্যুকে মেনে নিয়েছে। ঘরে বসে সাধারণভাবে জীবন যাপনের মতো অবস্থা কারো নেই। বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া না পেয়ে করছে অমানবিক আচরণ। শুধু বেঁচে থাকার জন্য পেশার পরিবর্তন করছে অনেকেই। মানুষ এখনও জানেনা কবে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। আবার কবে আসবে বিগত দিনগুলো? এই বিশ্বাসে পড়ে আছে অনেকেই।

আগের দিনে ফিরে আসতে হলে টিকে থাকাটা জরুরি। টিকে থাকতে হলে মনোবল থাকতে হবে। কিন্তু করোনাভাইরাস মানুষকে কঠিন এক জগতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। সকলেই প্রায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মূহুর্তে নিজের একক ক্ষতিকে পূরণ করতে গিয়ে অন্যের প্রতি অবিচার করা অন্যায়। আর এই অন্যায় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। যা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ তাদের কাছে করোনার চেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে ক্ষুধা। এর থেকে মুক্তি চায় সবাই। বেড়িয়ে আসতে হবে এসব অন্যায়, অবিচার থেকে। আর এই পরিস্থিতি ভালো রাখতে চাইলে সবাইকে আচরণগত পরিবর্তন করতে হবে। সবার সাথে মানবিক আচারণ করতে হবে।

একটু মানবিক হয়ে অন্যের প্রতি মহমর্মিতা অনুভব করলেই কমে আসবে অনিয়ম, দুর্নীতি। এই ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে আমরা কতটা তুচ্ছ তা আজ প্রমানিত। অতএব, ভাইরাস থেকে বাঁচতে যেমন সচেতন হওয়া দরকার। ঠিক তেমনি সবার সাথে ভালো থাকতে হলে অমানবিক আচরণ পরিত্যাগ করতে হবে।

কাফিল আহমেদ
সংবাদকর্মী, বার্তা বাজার

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর