নওগাঁয় অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁয় ‘১ হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম-মাল্টিপারপাস হল’ নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে।

জেলা পরিষদ থেকে জানানো হয়, জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে নওগাঁ ইথেন-কেএসএ-টিটিএসএল জয়েন্ট ভেঞ্চার নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ‘এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম-মাল্টিপারপাস হল’ নির্মানের দায়িত্ব পায়। কাজটির প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয় ১৯ কোটি ৮৮ লাখ ৮১ হাজার ৪২৯ টাকা এবং যার চুক্তি মূল্য ধরা হয় ১৭ কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার ১৬ টাকা। কাজটি শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে এবং শেষ হবে আগামী ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারীতে।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ২২/০৬/২০২০ তারিখে কাজের সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইমন শেখ সহ দুইজন একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘গত ০২/০৩/২০২০ তারিখে কাজের প্রকল্পের সাইট পরিদর্শনকালে দেখা যায় প্রকল্পের পশ্চিম পাশে বড় বড় ডিস মাটি দ্বারা ভরাট হয়েছে। মাটি গুলি এঁটেল মাটি ছিল। এ ধরনের মাটি দ্বারা কেন ভরাট করা হচ্ছে জানতে চাইলে ঠিকাদার পক্ষ থেকে জানানো হয় পরবর্তীতে স্পেসিফিক সয়ল দ্বারা মাটি ভরাটের কাজ করা হবে। ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যে এঁটেল মাটি দ্বারা উক্ত স্থান দ্রুত ভরাট করা হয়। আনুমানিক আরও চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতা ভরাট অবস্থা রয়েছে। উক্ত ভরাটের উপর ফ্লোরটি আরসিসি স্লাব দ্বারা নির্মাণ ধরা হয়েছে। মাটির কাজটি স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সংশোধনের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা যেতে পারে।’

কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কাজের জন্য যে রডগুলো রাখা হয়েছে সেগুলোতে মরিচা ধরেছে। নিম্নমানের বালু ও তিন ধরনের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ছুটির মধ্যে ভরাট কাজে এঁটেল জাতীয় মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও বিম ও কলাম তৈরীতে কাঠের সাটার্রিও ব্যবহার করা হয়েছে।

ইথেন-কেএসএ-টিটিএসএল জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বলেন, কাজে কোন ধরনের মরিচা ধরা রড ব্যবহার করা হয়নি। রডগুলো নতুন ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকায় এমনটি হয়েছে। এছাড়া মরিচা ধরলেও কোন সমস্যা হয় না। কাঠের সার্টার ব্যবহার করা হলেও পরবর্তীতে স্টিলের সার্টার ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর থেকে স্টিল সার্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া গেড্রেশনের কারণে এক ধরনের পাথর ব্যবহার করা যায়না। এ কারণে দুই-তিন ধরনের পাথর ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া ভরাটে কি ধরনের মাটি ব্যবহার করতে হবে শিডিউলে তা উল্লেখ করা হয়নি। স্পেশিফিকেশন অনুযায়ী যা প্রয়োজন সে ধরনের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

সুপার ভিশন ইঞ্জিনিয়ার এ্যাক্ট ডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর প্রকৌশলী মো. সাইমন শেখ বলেন, কাঠের সার্টারিং আগে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এখন স্টিলের সার্টার তৈরী করা হচ্ছে। করোনার ছুটিতে আমাদের অনুপস্থিতিতে ভরাটে এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। একারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এছাড়া বালু ও পাথরের গুনগত মান পরীক্ষা করা হয়েছে। কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি বলে জানান তিনি।

নওগাঁ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম ফজলে রাব্বি বলেন, রডগুলো বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে মরিচা ধরেছে। এছাড়া ভাল পাথরের সঙ্গে খারাপ পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। স্টিলের সার্টারিং ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকার সুযোগে ভরাট কাজে এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। কাজ তদারকিতে যে দুইজন কনসালটেন্ট ছিল তাদের গাফিলতি থাকলেও থাকতে পারে। এছাড়া এ ধরনের একটা মানসম্মত অবকাঠামো করতে গেলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্যতা বলে মনে হচ্ছে।

বার্তা বাজার / ডি.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর