সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু: স্ত্রী-শাশুড়িকে আসামি করে মামলা

নিজ বাসায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাংবাদিক নান্নুর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে মামলাটি করেন। বাড্ডা থানায় করা এ হত্যা মামলায় নান্নুর স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবী (৪৫) ও শাশুড়ি মোছাম্মদ শান্তা পারভেজকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩৮।

৬ মাস আগেও একই বাসায় একইভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর একমাত্র ছেলে পিয়াসও।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড্ডা থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম জানান, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে গুলশান বিভাগ পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, সিআইডি ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বাদী নজরুল ইসলাম খোকন উল্লেখ করেন, ‘আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু তার স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবীর সঙ্গে আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার ১০ তলায় বসবাস করত। গত ১১ জুন রাত সাড়ে ৩টায় আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়; সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকাল ৮টায় মারা যায়।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঘটনার সময় আমি নড়াইলের নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম, আমি আমার মেজো ভগ্নীপতি আনসার হোসেনের কাছ থেকে নান্নুর অগ্নিদগ্ধের খবর পাই। এও জানতে পারি নান্নুর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। ঘটনার সময় স্ত্রী ছাড়াও নান্নুর শাশুড়ি শান্তা পারভেজও ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। আমরা আরও জানতে পারি, নান্নু গত ১১ জুন রাত ১টার দিকে বাসায় ফেরে। বাসায় ফেরার পর স্ত্রী পল্লবীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই বাসায় আগুন লাগে। নান্নু দগ্ধ হয়। নিজে পাইপ এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেনি এবং নান্নু নিজেই ১০ তলা থেকে হেঁটে নিচে নামে। সেখানে আশপাশের ফ্ল্যাট মালিকরা নান্নুকে হাসপাতালে নেন।’

মামলার এজাহারে নান্নুর ভাই নজরুল ইসলাম আরো উল্লেখ করেছেন, ‘আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলু ও ভাগ্নে সাজ্জাদ হোসেন টিপু একটি ভাড়া গাড়িতে ঢাকায় আসে, তারা হাসপাতালে যেতে চাইলে পল্লবী ও তার অফিসের জনৈক সিইও তাদের হাসপাতালে যেতে নিষেধ করেন। পরে তারা হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় যান। নান্নু মারা যাওয়ার পর আমাদের না জানিয়ে তার স্ত্রী ও সেখানে উপস্থিত পল্লবী যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি তার ব্যবহৃত একটি কালো রঙের পাজেরো গাড়িতে করে স্ত্রী পল্লবীর গ্রামের বাড়ি যায়। ওই সিইও’র সহযোগিতায় নান্নুর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পল্লবী তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার ভাঙ্গুরা গ্রামে দাফন করেন। আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলুসহ আত্মীয়-স্বজনরা লাশ দেখতে চাইলে তাদের দেখতে দেয়া হয়নি। আমি লোক মারফত আরও জানতে পারি, নান্নু হাসপাতালে থাকার সময় তার স্ত্রী পল্লবী মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ভোর ৪টায় স্যুপ খাওয়ায় নান্নুকে। আর সেই স্যুপ পল্লবীর অফিসের জনৈক সিইও সাহেবের বাসা থেকে রান্না করে আনা বলে জানতে পেরেছি।’

উল্লেখ্য, আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার ১০ তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত ১২ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন।
ডিবিসি নিউজ

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর