আলফাডাঙ্গায় ফসলি জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব

ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিন ফসলি জমিতে গণহারে চলছে পুকুর বা দিঘি খনন। প্রতিদিনই উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে খনন যন্ত্র এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।

প্রতি বছর বাড়ছে পুকুর খননের আকার-আয়তন। কমে আসছে ফসলি জমি। উপজেলা জুড়ে প্রকাশ্যে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চললেও যাদের দেখভাল করার কথা সেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ রয়েছেন নিশ্চুপ।তবে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে দু-একটি পুকুর খনন বন্ধ করলেও পুনরায় আবার খনন করছেন।এসব জমির মালিকেরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ভাটার মালিকদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তাঁদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।মালিকেরা প্রতি একর জমি বছরে ৩০-৩২ হাজার টাকা দরে ১০ বছরের জন্য ইজারা দিচ্ছেন। ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

ফলে অবৈধভাবে ফসলি জমিতে পুকুর তৈরি করে মাটি বিক্রি করায় কৃষি জমি হ্রাস পাবার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে শত শত বিঘা আবাদী জমি। এভাবে জমির শ্রেণীর পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় কৃষি জমি হ্রাস পাবার পাশাপাশি এলাকায় পরিবেশ দূষণ বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলের মাঠে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলছে। আর খননের পর এসকল বেশিরভাগ মাটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ও ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।আর এসকল মাটি বহনকারী ট্রাক্টর অবাধে চলাচল করায় অল্পদিনেই নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। এতে করে দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী এসকল মাটি গাড়ি চুক্তিতে বিক্রি করছে।প্রতি গাড়ি ভর্তি মাটি এক হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি করছে।সেই সঙ্গে যারা গাড়িগুলো চালাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বয়স পনেরো থেকে বিশের মধ্যে। এদের কোনও ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ি চালানোর কোনও বৈধ কাগজপত্রও নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নে মালা এলাকায় সুইচ গেইটের পাশে তিন ফসলী ৭-৮একর জমিতে বেশ কিছু দিন ধরে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে পুকুর খনন করা হচ্ছে।পরে জানা যায়, জমির মালিক কাশিয়ানী জি.সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিগার সুলতানা রিক্তা ও তার স্বামী সৈয়দ নান্নু আলী ১০বছরের চুক্তিতে এটি লিজ দিয়েছে।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, আইনকে উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছেন। আর এসব পুকুরের উঁচু পাড়ের কারণে পাশের নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।ফলে আবাদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।আর প্রতিদিন গ্রাম্য সড়কে শত শত ট্রাক যাতায়াত করায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি শিশুকিশোরদের রাস্তায় চলাচলে আতংকে থাকতে হয়।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন মাহমুদ জানান, “এক ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা যেতে পারে, কিন্তু তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা ঠিক নয়।তিনি আরো বলেন,এসকল জমিতে পুকুর খনন করতে হলে আমাদের নিকট অনুমতি নিতে হয় কিন্তু কেউ অনুমতি নেয় না।আমরা আইনুনাগ ব্যবস্থা নিতে পারিনা,প্রশাসন পারে।তবে আমরা পরামর্শ দিতে পারি”।

এপ্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, “ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।শীঘ্রই এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে”।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর