স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ইবি অধ্যাপক ড.মাহবুবর রহমানের গল্প

স্বপ্ন খুবই রোমাঞ্চকর একটি বিষয়।স্বপ্ন যখন সত্যি হয় বাস্তবে রূপ নেয় সফল হয় তখন সেসব সফলতার গল্পগুলো শুনে বা পড়ে আমরা আনন্দিত হই অনুপ্রেরণা পাই।আসলে সেই সব সফলতার গল্পগুলো একদিনে লেখা কোন রম্যকাহিনী নয়।

গল্পগুলো অনন্ত কালের পথে হেটে হেটে এক গুচ্ছ স্বপ্ন বেচবে বলে,তিল তিল করে গড়ে তোলা কোন এক সংগ্রামী জীবনের উপসংহার। নিজেকে যোগ্যতার আসনে অধিষ্ঠিত করবার প্রয়াসে হাজারো সমস্যাকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমেই একজন মানুষ স্থান পান ইতিহাসের পাতায়।হাজারো বাধাকে উপেক্ষা করে তারা ইতিহাসের পাতায় লেখেন সফলতার গল্প।

আজকে তেমনি একজন সফল মানুষের গল্প নিয়ে আমাদের এই ছোট্ট আয়োজন।তিনি আর কেউ নন,তিনি হলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সফল প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন ইবির হাজারো শিক্ষার্থীকে। ইবিকে উপহার দিয়েছেন এক নির্মল,কোলাহলমুক্ত,নিরাপদ সুশৃঙ্খল পরিবেশ,যা একজন শিক্ষার্থীর কাছে অনেক বড় পাওয়া।

এ মানুষটি তার কাজের মাধ্যমে ইবির ইতিহাসে সফল প্রক্টর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তার জীবনযুদ্ধের গল্পটি কিন্তু এতোটা মসৃণ ছিলো না। হাজারো বাধা-বিপত্তির মাঝেও নুয়ে না পড়া মানুষটি উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার অন্তর্গত সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৭৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।বাবা মৃত বাছের উদ্দিন এবং মাতা মরিয়মের ছোট সন্তান ড. মাহবুবর রহমান ছোট বেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত চটপটে এবং বুদ্ধিমত্তায় ভরপুর এক বিস্ময় বালক।অল্পকিছু দিনের মধ্যেই তার অসামান্য দূরদর্শীতা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি পরিবারসহ সমাজের সকলের চোখে প্রতিভাবান এক বালক হিসেবে সমাদৃত হোন।

দুরন্ত এই বালকের লেখাপড়ার হাতে খড়ি হয় পরিবারেই,আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু ১৯৭৯ সালে।সেই সময় ১৯৮৯ খালিসা বেলপুকুর হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে গৌরবের সাথে উত্তীর্ণ হোন। ১৯৯১ সালে সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগে ভর্তি হোন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।

১৯৯৪ সালে বি.এস.সি অনার্সে উচ্চত্তর দ্বিতীয় শ্রেনীতে প্রথম ও ১৯৯৫ সালে তিনি মাস্টার্সে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শেনীতে উত্তীর্ণ হোন।অত্যন্ত জ্ঞানী এবং চৌকস এই মানুষটির ভিতরে ছিল নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্ষমতা এবং দক্ষতা । স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে থেকে দায়িত্বপালন করেছেন মানবউন্নয়নে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গৌরবের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন মানবতার জন্যে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি,সিডনি থেকে ২০০৯ সালে তিনি উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পথচলা শুরু ১৯৯৯ সালে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (বর্তমানে ইইই) বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে ২০০২ সালে সহকারী আধ্যাপক পদে উন্নীত হোন।২০০৭ সালে সহযোগী এবং ২০১২ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হোন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি সক্রিয় রাজনীতি করে আসছেন প্রফেসর ড.মাহবুবর রহমান।বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই মানুষটি বঙ্গবন্ধু ন্যায়-নীতি আদর্শকে বুকে ধারণ এবং লালন করে ন্যায় ও নিষ্টার প্রশাসনের খুব কাছে থেকে কাজ করে চলেছেন আধুনিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে।তিনি শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম শাপলার প্রত্যক্ষ ভোটে কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

সংগ্রামী,মেধাবী এই শিক্ষক ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট হিসেবে যোগদান করেন।প্রগতিশীল কর্মকান্ডকে বেগবান করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে বঙ্গবন্ধু হলকে আরো সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে গড়ে তুলতে হলের সামনে সংস্কার করেন দৃষ্টিনন্দন পুকুর।বর্তমানে পুকুরটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম। হলের প্রধান ফটকে প্রাণ দিতে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রবল বাধার মুখে হলের ফটকের উপরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও বাংলাদেশের মানচিত্র স্থাপন করেন।

শুধু এতটুকুতেই থেমে যাননি তিনি, হলের মসজিদের উপরে লেখা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা তুলে দিয়ে সেখানে শহীদ মিনার ও স্মৃতি সৌধ এর ছবি স্থাপন করেন। তিনিই প্রথম যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল চর্চাকে বেগবান করার লক্ষ্যে স্মৃতি সৌধে কনসার্ট এর আয়োজন করেন।শুধু তাই নয় সর্বপ্রথম তিনিই ছেলেদের হলে ছেলে- মেয়েদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের পাশাপাশি তার বিভাগকেও তিনি উন্নত করে গড়ে তুলেছেন। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গৌরবের সহিত ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স এ্ন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (বর্তমানে ইইই) বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৩ সালে তিনি ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। ছাত্র উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে।তারমধ্যে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়ে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ধন ছিলো অন্যতম। এইসময়কালে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা অসুবিধায় সর্বদা সহায়তা দিয়েছেন এবং সকল সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।২০১৪ সালে তিনি প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো পুনরায় প্রক্টর হিসেবে নিযুক্ত হোন প্রফেসর রহমান। সততা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে কাজ করেছেন তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জায়গাতেই রয়েছে তার সুনাম সুখ্যাতি। বর্তমান সময়ে তাঁর কয়েকটি অর্জন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মরা গাছের কাঠ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ/অফিসে দৃষ্টিনন্দন ফার্নিচার সরবরাহ, ক্যাম্পাসের শোভা বর্ধন করতে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য ফুল গাছ রোপণ,পিটিজেট সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইবি প্রশাসনকে সহায়তা করা।

প্রক্টর হিসেবে তার সফলতম অর্জনের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো বিনা রক্তপাতে প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিবির মুক্তকরণ।বর্তমানে ক্যাম্পাসে মাদক, সন্ত্রাসবাদ,জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.রাশিদ আসকারী’র নেতৃত্বে উপহার দিতে বদ্ধপরিকর প্রফেসর ড.মাহবুবুর রহমান। তিনি বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

শুধু তাই নই, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তার নিজের গ্রামের অসহায় মানুষের সবসময় পাশে থাকেন তিনি, যতটুকু পারেন নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন সহযোগিতা করার।তিনি কয়েকটি সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে জনগণ ও মানবতার সেবাই কাজ করে যাচ্ছেন।

অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন,জীবনে সফল হতে গেলে প্রয়োজন একনিষ্ঠ সাধনা ও অধ্যাবসায়।সফলতার জন্য পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর