রায়গঞ্জে ভ্যান চালকের জীর্ণ কুটিরে চাঁদের আলো

সংসারের অভাব-অনটন আর বাবার তিন চাকার ভ্যানের উপার্জনে পরিবারের ছোট দুই ভাইয়ের লেখা পড়ার মাঝে ও অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা চালায় জেসমিন খাতুন। পরিবারে নুন (লবণ) আন্তে পান্তা ফুরায় তবুও দারিদ্র্যতার কাছে হার মানেনি জেসমিন। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় চরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

গরীবের ঘরে জন্ম নিয়ে পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জেসমিন। কিন্তু, জেসমিন কি পারবে এ অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে!রায়গঞ্জ উপজেলার অসহায় দরিদ্র এক ভ্যানচালকের মেয়ে মোছাঃ জেসমিন খাতুন এ যেন গরীবের জীর্ণ কুটিরে চাঁদের আলো। ঠিকমত তিন বেলা খেতে,প্রাইভেট ও ভালো পোশাক পরতে না পারলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং নিরলস অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য পেলেও ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত জেসমিনের পরিবার।

কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কিত মেধাবী জেসমিন খাতুন (১৫) এর আগে ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। মোছাঃ জেসমিন খাতুন অত্র উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের শৌলী সবলা গ্রামের ভ্যানচালক মো.রেজাউল করিমের মেয়ে। মা মোছাঃ বিউটি খাতুন পেশায় একজন গৃহিনী।

বুধবার (৮ মার্চ) সরজমিনে গেলে মেধাবী জেসমিনের বাবা জানান,আমি নিজে একজন ভ্যানচালক। প্রতিদিন ধানগড়া বাজারে গিয়ে ভ্যান চালায়। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে দুই ছেলে ও বড় মেয়ে জেসমিনকে খুব কষ্টে পড়াশোনা করাচ্ছি। আমার নিজস্ব কোন স্বপ্ন নেই। সব স্বপ্ন তিন সন্তানকে নিয়ে। ভ্যান চালিয়ে ছেলে মেয়ের স্বপ্ন পূরণের আশায় কোন রকম পরিবার নিয়ে বেচে আছি।

এদিকে জেসমিনের মা বিউটি খাতুন কান্না কন্ঠে বলেন,তার এক মেয়ে আর দুই ছেলে মিলে পাঁচ জনের পরিবার। গেদির বাব ভ্যান চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে তিন বেলা সন্তানদের মুখে ভালো খাবার জোটে না। মেয়েটা অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। প্রতিবেশীদের একটা মিষ্টি ও খাওয়াতে পারলাম না। এহন মেয়েকে কলেজে ভর্তি করতে টাকা,বই ও জামা কাপড় লাগবে। এতো ট্যাহা কই পামু?

কিন্তু মেয়েটা আরো পড়ালেহা করতে চাই। আমার আরও দুইখান পোলা আছে একটা ক্লাস সেভেনে পড়ে আরেকটা ওয়ানে পড়ে। এহন মেয়েটার পড়ালেখা কিভাবে করামু?

এ বিষয়ে জেসমিন খাতুন বলেন,সে টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে বিনা টাকায় পড়িয়েছে। সে প্রতিদিন ৯/১০ ঘন্টা করে লেখাপড়া করেছে। রাত্রে তার মা বাবা জেগে থেকে ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত পড়াশুনা করার জন্য সহযোগিতা করেছে। তার এখন স্বপ্ন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করার পাশাপাশি বাবা-মায়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা।কিন্তু বড় বাধা আর্থিক সমস্যা। এজন্য সে সকলের দোয়া প্রার্থী।

স্থানীয়রা বলছেন,দরিদ্র সংসারে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো তার প্রায় অসম্ভব। ফলে মেধাবী দুই ছেলের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে দরিদ্র বাবা-মায়ের দু’চোখে আমাবস্যার ঘোর অন্ধকার। এ অবস্থায় শিক্ষা সচেতন বিত্তবান ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেছে মেধাবী ছাত্রী জেসমিন খাতুন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর