অনুমতির আগে নিজেদের কিট দিয়ে পরীক্ষা করতে পারবে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিট দিয়ে গণমানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কাজ শুরু করা এবং তা বাজারজাত না করার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে গতকাল সোমবার চিঠি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

আজ মঙ্গলবার(২৬ মে) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাদের উদ্ভাবিত কিট গণমানুষের করোনা শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হবে কি না, তা নিয়ে দুরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। গণস্বাস্থ্য কখনো বলছে, করোনা পরীক্ষার কাজে কিট ব্যবহার করবে। আবার কখনো বলছে, অভ্যন্তরীণ গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে ৫০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত রোববার এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘ঈদের পরের দিন থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষায় অ্যান্টিজেনের জন্য ৪০০ আর অ্যান্টিবডির জন্য ৩০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা নেওয়া হবে।’

কিন্তু গতকাল দুপুরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জি আর কোভিড-১৯ র‍্যাপিড ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের জি আর কোভিড-১৯ র‍্যাপিড ডট ব্লট কিটের পরীক্ষা শুরু করবে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অভ্যন্তরীণ গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করোনার লক্ষণ আছে এমন ৫০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই নমুনা সংগ্রহ গবেষণার অংশ। কোনো সেবা বা রোগ নির্ণয়ের অংশ নয়।’

কথার প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের ডিজি মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে যদি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ইন্টার্নাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিয়ে থাকে তাহলে আমরা দেখতেও যাব না, তারা কী করছে। তারা তাদের মতো করে ট্রায়াল চালাতে পারবে। সেজন্য ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া লাগবে না।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে দেখলাম, গণস্বাস্থ্য তাদের কিট দিয়ে গণমানুষের করোনা পরীক্ষা করবে। এটা তো হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষণা শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। গণমাধ্যমে দেখলাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বরাত দিয়ে কিটের ৭০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। কে ঠিক করল এই মূল্য? আমরা তো জানি না।’

মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, ‘তা ছাড়া চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলে আপনি কোনো মানুষের শরীরে এটা ব্যবহার করতে পারবেন না। বিএসএমএমইউতে গবেষণার কাজ চলছে। গবেষণা শেষে তা যাচাই-বাচাই করে দেখা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে যে, ওই কিট দিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে নাকি হবে না। সেজন্য আমরা গতকাল গণস্বাস্থ্যকে চিঠি দিয়ে বলে দিয়েছি, যাতে করে তারা তাদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে গণমানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত না করে এবং এ কিট সরবরাহ ও বাজারজাত করা থেকে বিরত থাকে।’

এদিকে গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে কিটের কার্যকারিতা যাচাইয়ের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুমতি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য গত ২ মে বিএসএমএমইউ একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয় বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহিনা তাবাসসুমকে।

সঠিকতা যাচাইয়ের ওই কমিটির একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়ে দেব।’
এনটিভি

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর