খানসামায় পুরো রমজান মাস জুড়ে ৩০০ পরিবারকে পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তা প্রদান

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন অসহায় দুস্থ্য মানুষদের ত্রাণ সামগ্রী সহায়তার পাশাপাশি পুরো রমজান মাস জুড়ে ৩০০ পরিবারকে রান্না করা পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রী ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার দু’টি সংগঠন।

পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকায় প্রতিদিন ভাত, মাছ-মাংস, ডিম, শাক-সব্জি থাকত। এসব শাক-সব্জিও কেনা হত স্থানীয় কৃষকদের কাছে। এতে স্থানীয় কৃষকরাও তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতেন।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সখিনা ফজলুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সকাল ৯টা থেকে রান্নার কাজ চলত। বিকাল ৩টা থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ভ্যান, সাইকেলে করে স্বেচ্ছাসেবীরা ৩০০ রোজাদার ব্যক্তি ও অসহায়দের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিত।

ভাতের সাথে থাকত মুরগির মাংস অথবা মাছ, ডিম এবং সব্জি। প্রতিটি প্যাকেটে দুইজনের খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবার রান্না করা থেকে শুরু করে বিতরণের কাজ গুলো করেন স্বেচ্ছাসেবী কয়েকজন তরুণ। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি অর্থ সংগ্রহ করা হয় দুটি সংগঠনের মাধ্যমে।

“সাপোর্ট বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড খানসামা” নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দায়িত্ব নেন প্রতিদিন ৩০০ পরিবারকে খাদ্য সরবরাহের। রমজান মাসের শুরু থেকে শেষদিন পর্যন্ত তাদের এই কার্যক্রমে খরচও হয়েছে লক্ষাধিক টাকা!

সার্পোট বাংলাদেশ নামের সংগঠনের উদ্যোক্তা ঢাকা জজকোর্ট এর অ্যাডভোকেট সোয়েব হোসেন শিজু বলেন, “করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই কর্মহীন মানুষের জন্য আমরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করি। এই কঠিন সময়টি দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে আমরা পুরো রমজান মাস জুড়ে কর্মহীন, অসহায় ও দুস্থ্য পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেই। প্রথমে একটু কষ্ট হয়েছিল কিন্তু পরে আমাদেরকে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কারণে পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রতিদিন ৩০০ পরিবারকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ঈদ এবং ঈদের পরেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।”

ঢাকাস্থ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সংগঠন ইউনাইটেড খানসামা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানান সাপোর্ট বাংলাদেশ সংগঠনের সদস্যরা।

ইউনাইটেড খানসামার সভাপতি সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. আশিকুর রহমান জানান, করোনাকালে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ, তারা দীর্ঘদিন কর্মহীন অবস্থায় আছে। রমজান মাসে গ্রামে অনেকেই ভালোমত খেতেও পারেন না। আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে এবং সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিন ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করি। রান্না থেকে শুরু করে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা। যারা রমজানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই কাজের সাথে যুক্ত আছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ! আশা করি তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশের নতুন একটি দিগন্ত উম্মোচন হবে। আমরা পরিকল্পনা করছি এই সহায়তার বিষয়টি আরো দীর্ঘায়িত করতে।”

উদ্যোগটির প্রশংসা করে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, “দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে তরুণদের এগিয়ে আসার ভূমিকা অনেক পুরনো। খানসামায় সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই কর্মহীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সাপোর্ট বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড খানসামা প্রতিদিন ৩০০ পরিবারকে যে খাদ্য সহায়দা প্রদান করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের ক্রান্তিকালে তরুণদের এরকম ভূমিকাই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। সমাজের বিত্তবান মানু্ষেরাও যেকোন বিরূপ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসবেন বলেও জানান তিনি।”

বার্তা বাজার/টি.সি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর