করোনার কর্মক্ষেত্র এই অঞ্চল নয়

করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে পৃথিবীর বহু মানুষের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এখন এই রোগে যত মানুষ মারা যাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন ভয়ে, আতঙ্কে এবং অন্যরোগের স্বাভাবিক চিকিৎসার অভাবে।

অথচ বাস্তবতা বলে, পৃথিবীর সকল দেশের জন্যে এই রোগ সমানভাবে আতঙ্কের নয়। ইউরোপের পাঁচ-সাতটি দেশ এবং আমেরিকাকে বাদ দিলে পৃথিবীতে এই রোগ এখনো পেন্ডিমিক নয়।

আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখতে পারি, পৃথিবীতে আসলে কি ঘটে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে। করোনা ভাইরাসের রোগী বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে ৮ মার্চ। বাংলাদেশ প্রথম মৃত্যু ১৮ মার্চ। তারপর প্রথম মৃত্যুর পর থেকে ৫৮তম দিন আজ পর্যন্ত আমাদের মোট মানুষ মারা যায় ২৮৩ জন মানুষ।

অন্যদিক, জার্মানীতে প্রথম রোগী ধরা পড়ে ২৭ জানুয়ারী এবং তাদের প্রথম মৃত্যুর সরকারী রেকর্ড হলো ৯ মার্চ। তারপর তাদের ৫৮তম(৫ মে) দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬,৯৯৩ জন মানুষের।

ব্রিটেনে প্রথম রোগী ধরা পড়ে ৩১ জানুয়ারী এবং তাদের প্রথম মৃত্যুর সরকারী রেকর্ড হলো ৫ মার্চ। তারপর তাদের ৫৮তম(১ মে) দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৭,৫১০ জন মানুষের।

ইতালিতে প্রথম রোগী ধরা পড়ে ৩১ জানুয়ারী এবং তাদের প্রথম মৃত্যুর সরকারী রেকর্ড হলো ২১ ফেব্রুয়ারী। তারপর তাদের ৫৮তম(১৮ এপ্রিল) দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩,২২৭ জন মানুষের।

স্পেনে প্রথম রোগী ধরা পড়ে ৩১ জানুয়ারী এবং তাদের প্রথম মৃত্যুর সরকারী রেকর্ড হলো ৩ মার্চ। তারপর তাদের ৫৮তম (২৯ এপ্রিল) দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৭৫ জন মানুষের।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রোগী ধরা পড়ে ২১ জানুয়ারী এবং তাদের প্রথম মৃত্যুর সরকারী রেকর্ড হলো ২৯ ফ্রেব্রুয়ারী। তারপর তাদের ৫৮তম (২৭ এপ্রিল) দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৬,৭৯৫ জন মানুষের।

আর আমাদের আঠারো কোটি মানুষের দেশে আজ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮৩ জন। এটি বহির্বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আমাদের যেসব প্রবাসীরা আছেন তাদের ভিতরে করোনায় যত সংখ্যক মারা গেছেন তার চারভাগের একভাগও না।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আমাদের বাংলাদেশী নাগরিক মারা গেছেন প্রায় আড়াই শ জন। সে দেশের তুলনায় আমাদের চিকিৎসা সামর্থ্য প্রায় জিরোর কাছাকাছি। তাদের মতো করোনা যদি আমাদের আক্রমণ করতো তবে আমাদের মানুষ মারা যেতো লাখে লাখে। কিন্তু না, করোনার কর্মক্ষেত্র এই অঞ্চল নয়।

অনেকে রোগীর সংখ্যা দেখে ভয় পাচ্ছেন। রোগী সংখ্যা বাড়লেই ভয়ের কিছু নেই। লক্ষ্য করুণ, ফ্রান্সে রোগীর সংখ্যা হলো এক লাখ আটাত্তর হাজার, তাদের মারা গেছেন সাতাশ হাজার।

ইতালিতে রোগী প্রায় দুই লাখ বাইশ হাজার, তাদের মারা গেছেন একত্রিশ হাজার। ব্রিটেনে রোগী দুই লাখ ত্রিশ হাজার, তাদের মারা গেছেন তেত্রিশ হাজার।

অথচ রাশিয়ার রোগী হলো দুই লাখ বায়ান্ন হাজার, কিন্তু তাদের মারা গেছেন মাত্র তেইশ শ জন। সুতরাং রোগীর সংখ্যা দেখেই ভয়ের কিছু নেই। কারণ এটি একটি রাজনৈতিক ভাইরাস। এর কর্মকাণ্ডও রাজনৈতিক।

বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া বিভিন্ন হিসাব দিয়ে মানুষকে অনবরত ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন। এরা এমনভাবে হিসাবগুলো সাজাবে যেভাবে মানুষ আতঙ্কে থাকেন।

একটি ব্যাপক জনপ্রিয় মিডিয়া প্রতিদিন মানুষকে ভয়ের উপরে রাখতো, শেষে জানলাম তাদেরই একটি ঔষধগ্রুপ করোনাভাইরাসে মোটামুটি কাজ করে, এরকম একটি ঔষধ মার্চ মাস থেকে তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন।

একদিকে তারা মানুষকে আতঙ্কে রেখে মাঠ রেডি রাখলেন ঔষধ বিক্রির জন্যে, অন্যদিকে ঔষধ তৈরি জারি রাখলেন। শেষে যখন প্রতিকোর্স ঔষধের দাম তারা ধরলেন ষাট হাজার টাকা করে, তখন সব থলের বিড়াল বের হয়ে পড়লো।

প্রথম দিকে এরা ইতালির সাথে হিসাব মিলিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতো। যখন আমরা ইতালির হিসাব কাটিয়ে বেঁচে থাকলাম, তখন এরা গেলো আমেরিকার হিসাবে। এখন তারা মূলত আবোল তাবোল হিসাব দিচ্ছেন।

মহাসংকটেও মানুষকে আশার রোডম্যাপ দিতে হবে। কি করলে বিপদ আর কি করলে বিপদ কমবে সে পথ দেখাতে হবে। পৃথিবীতে কোন সমস্যাই অনন্তকাল ধরে থাকবেনা, সব সমস্যারই সমাধান আছে। অথচ WHO আজ বলে দিলেন, করোনা সমস্যার সমাধান কখনো নাও হতে পারে! একটি প্রতিষ্ঠান কতটা পচে গেলে, কতটা অযোগ্য লোকের হাতে পড়লে মানুষের জ্ঞানের উপর এমন অবজ্ঞা দেখাতে পারে!

এ প্রতিষ্ঠান আজ কেন বিতর্কিত, কেন পশ্চিমারা কন্টিবিউশন বন্ধ করেছে হু-কে, কেন বলছে তারা একটি দেশের মাউথপিচ হিসেবে কাজ করছে, তা মানুষ ধীরে ধীরে বুঝবে।

পশ্চিমারা বিশ্বাস করছে, করোনা ভাইরাস যে দেশ ছড়িয়েছে, ভ্যাকসিনও সে দেশ সেল করার ধান্ধায় আছে। WHO তাদের জন্যে মার্কেট রেডি করছে। সেজন্যেই অন্যরা ভ্যাকসিন বানাচ্ছে শুনলেই WHO যাচাই বাচাই ছাড়া তা নাকচ করে দিচ্ছে। এসব অভিযোগের উত্তর নিশ্চয় ভবিষ্যৎ দিবে।

সার্বিক সব বৈশ্বিক তথ্যের আলোকে আমাদের এখনো প্রেডিকশন হলো, এদেশে করোনায় ব্যাপক প্রাণহানি হবেনা, ইনশাআল্লাহ। অনেকের রোগ হবে, রোগ চলেও যাবে কিন্তু তিনি জানবেনও না যে তার এই রোগ হয়েছিলো। শুধু সাহস আর ঈমানটা শক্ত রাখুন। ইনশাআল্লাহ সামনেই সুসংবাদ আসছে।

লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া

বার্তা বাজার / ডাব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর