১৬ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাবে ফণি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেসব অঞ্চল

কয়েকদিন ধরে আলোচনায় বিগত ৪৩ বছরের মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণি। বঙ্গোপসাগরের গভীরে সৃষ্ট ফণি প্রবল বেগে ইতোমধ্যে ভারতের ভুবনেশ্বর, পুরী এবং উড়িষ্যায় তাণ্ডব চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শনিবার সকালে বাংলাদেশে আঘাত হানবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ঘূর্ণিঝড়। এর পর প্রায় ১৬ ঘণ্টা বাংলাদেশে তাণ্ডব চালাবে ফণি।

ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রবাহে রাজধানীসহ সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, গাছ উপড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট উইন্ডি ডটকমের স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মহাপ্রলয়ংকারী এই ঘূর্ণিঝড় শনিবার সকাল ৭টার দিকে খুলনা উপকূল ও রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। তবে ফণির প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে শুক্রবার দিবাগত ৩-৪টার দিকে।

গতকাল পর্যন্ত আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ফণি ইতোমধ্যে ভারতে যেভাবে আঘাত হেনেছে তা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় কিছুটা শক্তিমত্তা হয়তো কমবে কিন্তু দুর্বল বলার সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

যে পথে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ফণি: উইন্ডির স্যাটেলাইট ম্যাপ অনুযায়ী শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ফণি ভারতের ভুবনেশ্বর অতিক্রম করে ব্যালাসোরে অবস্থান করছে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ফণি অবস্থান করবে কলকাতার নিকটবর্তী খারাগপুরে। শনিবার ভোর ৪টায় ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা অতিক্রম করবে। আবহাওয়া অফিসের ঘোষণা অনুযায়ী, ভোর থেকেই খুলনা উপকূল অঞ্চলে ৪/৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। ৭টার দিকে ফণি বাংলাদেশের খুলনা উপকূল অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

সকাল ৮টায় ঘূর্ণিঝড় ফণি বাংলাদেশে মেহেরপুর, রাজশাহী অঞ্চলে অবস্থান করবে। আসলে ফণির বিস্তৃতি এতো বেশি যে, উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর আশপাশের সবগুলো জেলাতে এ সময় ঝড়-বৃষ্টি দেখা দিবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হতে পারে। যা সারা রাত পর্যন্ত চলবে। এর পর রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হবে। ঘূর্ণিঝড় ফণি সমুদ্র থেকে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে।উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এর গতিবেগ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে।’

আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েব সাইট উইন্ডি অনুযায়ী, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণি ভারতের বেলডাঙ্গা হয়ে রাজশাহী অতিক্রম করবে। এ সময় ফণির তাণ্ডব দেখা যাবে মেহেরপুর, পাবনা, রাজশাহীতে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগেও এর প্রভাব পড়বে। এর পর বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজশাহী হয়ে রংপুর, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ফণির তাণ্ডব চলবে।

এর পর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ফণি নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, শিবগঞ্জসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করবে। পরে রাত ১০/১১টার দিকে গাইবান্ধা, শেরপুর, জামালপুর ও কুড়িগ্রাম কাঁপিয়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করবে ফণি। স্যাটেলাইটের হিসাবে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১৬ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাবে ফণি।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের ঘুর্ণনের গতিবেগ বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার, আর এটির অগ্রসর হওয়ার গতিবেগ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়টি পানির সংস্পর্শে আসলে এটির গতি বাড়বে আর স্থলভাগ দিয়ে অতিক্রম করলে গতিবেগ কমতে পারে।’

বন্যার আশঙ্কা: পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং কাছাকাছি ভারতীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর বিশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারা, কংশ, যাদুকাটা, তিস্তার পানির সমতল আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাড়তে পারে। কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বন্যা পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা আরো বলছেন, অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে বঙ্গোপসাগরের গভীরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়। ১৯৭৬ সালের পর এতো শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি ভারতীয় উপমহাদেশ। ফলে ৪৩ বছরের মধ্যে এটিই সবচাইতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। যার তাণ্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই অঞ্চল। ইতোমধ্যে ফণির প্রভাবে ভারতে বেশ কিছু লোকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর