কামাল পারভেজ ক্ষণজন্মা এক বীর পুরুষ

চরম সংকটময় সময় অতিক্রম করছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ ঘোটা বিশ্ব। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কোনঠাসা করে ফেলেছে বিশ্ব মানবতাকে। এখন পর্যন্ত এ রোগের প্রতিষেধক বের করতে পারেনি গোটা দুনিয়ার কোন চিকিৎসক। মানবতা ডুকরে কাঁদছে। এমন মহামারী আমাদেরকে গ্রাস করেছে, যার ফলে আমার একে অপরকে দেখতেও যেতে পারছি না।এমনকি প্রিয়জন না ফেরার দেশে চলে গেলেও আমরা দাপন কাফনেও অংশগ্রহণ করতে পারছি না। ঠিক এমনি সময়ে লিখতে বসছি দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহনের এক গর্ভিত মায়ের কৃতি সন্তানকে নিয়ে। যার সাথে আমার অবুঝ বেলায় (শিশু কালে) কথা হয়েছে।

লালমোহনের সূর্য সন্তান যখন না ফেরার দেশে তখন আমার বয়স দশ। কবরস্থ করার আগ পর্যন্ত আমার সাথে তার দুইবার দেখা হয়। প্রথম দেখেছি মরহুম হওয়ার এক অথবা দুই বছর আগে। বলে রাখি, তিনি আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ নন। দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে অন্য এক উপায়ে।

একদিকে কামাল পারভেজর জম্মস্থান লালমোহন অন্যদিকে আমার জম্ম তজুমদ্দিনে। বড় ভাই লালমোহন পড়াশোনা করার সুবাদে নাম শুনেছি ভি.পি কামাল পারভেজ নামক এক তরুণ নেতার।

পারভেজ ভাইয়ের সাথে প্রথম দেখাটা বড়োই স্মৃতিময়। ওই সময় যারা পবিত্র কাবা শরিফে হজ্ব করতে যেতেন পারভেজ ভাই সেই বিষয়ের কি যেন একটা দায়িত্বে ছিলেন। আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচা হজ্ব করতে প্রিয় নবীজির দেশে যাবেন। আর সে জন্যই আমাদের গ্রামে আসেন লালমোহনের ক্ষণজম্ম বীর পুরুষ। তখন ভাইয়া বাড়িতে এসে আম্মুকে বললেন, আমাদের বাসায় কামাল পারভেজ আসবে। আর তখনি দেখা হয় পারভেজ ভাইয়ের সাথে। কে জানতো এটাই আমার আর পারভেজ ভাইর সাথে জীবিত অবস্থার শেষ দেখা!

লালমোহনের সিংহ পুরুষের সাথে দ্বিতীয় তথা শেষ দেখা হয়েছিল আঁখি জ্বলে! খবর আসে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় ভিপি কামাল পারভেজ।

আজ কামাল পারভেজের ১৮তম মৃত্যু বার্ষিকী। অন্যদিকে আমার বয়স এখন ২৭। জম্ম তজুমদ্দিন হলেও আমার গড়ে ওঠা লালমোহন। ছাত্র জীবনের প্রায় ছয় বছর লালমোহন কেটেছে আমার। আর তখন বিভিন্ন জনের মুখে শুনতে পাই কামাল পারভেজের কীর্তি।

কামল পারভেজ কতটা কীর্তিমান ছিলেন তার রাজ সাক্ষী তো আমার নির্ভেজাল শিশুকাল। ১০ বছর বয়সে কোড়াল মাড়ার ইয়াছিনগঞ্জ (নতুন বাজার) বাজার থেকে ছোট সাইকেল ভাড়া করে যাই নয়ানি গ্রামের করিম রোডে। আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে বক্সে পড়ে থাকা কামাল পারভেজের নিথর দেহ। আর ঘরে অবরুদ্ধ স্বজনদের আহাজারী।

আমার মনে পড়ে বাড়ির রাস্তা দিয়ে ডুকতে হাতের বা পাশের ঘরে কাকে যেন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যারা কাছ থেকে দেখেছেন নিশ্চয় তাদের মনে আছে কামাল পারভেজের মুখের স্কিন উঠে যাওয়ার কথা। আমি শেষবার তার মুখ দেখেছি।

জেনে নিন লালমোহনবাসী কেমন ছাত্র নেতাকে হারিয়ে আজও কাঁদছে। কামাল পারভেজ ছিলেন, সরকারি শাহবাজপুর কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সফল (ভি. পি), ভোলা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, বালালমোহন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও বন্ধু মহলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

বলা যায়, লালমোহনের জন্য কামাল পারভেজ একটা নাম একটা ইতিহাস। শুধু ছাত্র বলে কামাল পারভেজ ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় এমনটা নন, সমান তালে লালমোহনের আপামর গণমানুষের কাছেও ছিলো তার গ্রহণ যোগ্যতা।

আজ আমরা তরুণ। কেউ না কেউ বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। তবে আমরা হারিয়েছি ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে কোন বাচ বাক্য ছাড়া।

আমরা জানি কামাল পারভেজ রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আমি বলব না। এট ভুল। আমি সেই এক্সিডেন্টেকে বলব, রোড হত্যা। যা সেকালে ছিল, একালেও আছে। বরাবরই মাফিয়াদের হাতে পরিবহন ব্যবস্থা।

নির্লোভ, স্বার্থহীন এবং সেবা পরায়ণ ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী নেতা কোন ছাত্রের বিপদে গা ঢাকা দিতে পারেন না। কামাল পারভেজও তার ব্যাতিক্রম নন। পরোপকারী কামাল পারভেজ মারাও গেছেন এক নিরীহ ছাত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে। আর তার বিদায়ের মাধ্যমে অপূরণীয় ক্ষতি হলো লালমোহনের ছাত্র রাজনীতির।

জন্মগ্রহণ করিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটা স্বাভাবিক। তবে খুব অল্প সময়ে চলে যাওয়া বড়ই বেদনাদায়ক। আর এর মাধ্যমে আমরা হারালাম বলিষ্ঠ কন্ঠে দূরদর্শী নেতৃত্ব দেয় এক সাহসী নেতাকে। কামাল পারভেজ ভোলাবাসীর মননে, মগজে সবসময় একজন বীর হিসেবে থাকবেন। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

আব্দুস সালাম
লেখক ও সাংবাদিক

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর