রোগীদের নিজের শুক্রাণু দিয়ে ৪৯ সন্তানের জনক যেই চিকিৎসক!

বিনা অনুমতিতে তার নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করে রোগীদের গর্ভধারণে সহায়তা করেছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে নেদারল্যান্ডের একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পরে ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এভাবে ৪৯টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

দুই বছর আগে মারা যাওয়া ওই ডাচ ডাক্তারের নাম ইয়ান কারবাত। তিনি রটারড্যামের কাছে একটি ক্লিনিকে সন্তান জন্মদানে সমস্যা হচ্ছে এমন মায়েদের চিকিৎসা করতেন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, শুক্রবার বিচারক এসব ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ফার্টিলিটি চিকিৎসক হিসেবে কারবাতের কাজ ছিল সন্তান জন্মদানে সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ডাক্তারি সহায়তা দেয়া এবং তাদের সন্তান নিতে সহায়তা করা। কিন্তু এসব ব্যক্তির অনুমতি না নিয়ে তিনি নিজেই ৪৯ টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

ফার্টিলিটি ক্লিনিকের একটি কাজ হল কোনো পুরুষের কাছ থেকে তার দান করা শুক্রাণু সংগ্রহ করা। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু দানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। আবার অনেক সময় চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা শুক্রাণু দানকারীকে নিজেরা পছন্দ করে নিয়ে আসেন।

এরপর সেই শুক্রাণু দিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরির পর সহায়তা নিতে আসা ব্যক্তিদের সন্তান জন্মদানে সহায়তা কর হয়।

ইয়ান কারবাতে এসব ক্ষেত্রে নিজেই নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করতেন বলে এখন জানা যাচ্ছে। তাও আবার চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসা লোকজনের কোনও অনুমতি ছাড়াই।

এই চিকিৎসকের ক্লিনিকে সহায়তার মাধ্যমে জন্ম নেয়া একটি শিশুর চেহারা দেখতে মারাত্মকভাবে মিলে যাচ্ছিলো ডাঃ কারবাতের সাথে। সেখান থেকেই সন্দেহের শুরু। ২০১৭ সালে তার সহায়তায় জন্মানো ৪৯ ব্যক্তি ও তাদের বাবা ও মায়েরা একই সন্দেহ থেকে আদালতে মামলা করেন।

এদের বেশিরভাগেরই জন্ম ৮০ দশকে। তাদের সন্দেহ হচ্ছিলো এই চিকিৎসকের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে।

কিন্তু ওই বছরই ৮৯ বছর বয়সে মারা যান সেই চিকিৎসক। এরপর তার বাড়ি ও অফিস থেকে বহু কাগজপত্র জব্দ করা হয়। সেই বছরই ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করে এই ব্যাপারে আদালত জানতে পারে।

কিন্তু এতদিন সবগুলো মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে কিছু বাধা নিষেধ ছিল। এখন আদালত তথ্য প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছে।

এগারো বছর ধরে নিজের বাবাকে খুঁজেছেন তার ক্লিনিকে চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ম নেয়া একজন। অবশেষে তিনি জেনেছেন তার বাবা স্বয়ং তার মায়ের চিকিৎসক।

তিনি বলছেন, ‘১১ বছর ধরে খোঁজার পর এখন আমি আমার জীবনে ফিরে যেতে পারবো। একটি অনিশ্চিত অধ্যায়ের অবশেষে সমাপ্তি হল। আমি খুশি যে অবশেষে আমি আমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছি।’

২০০৯ সালেই তার ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয়া হলেও, ডাঃ কারবাত নিজেকে দাবি করতেন ‘এসিস্টেড রিপ্রোডাকশন’ বিষয়ক একজন পথিকৃৎ হিসেবে।

তার বিরুদ্ধে সেসময় অভিযোগ ছিল তিনি শুক্রাণু দানকারীদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এখন সন্দেহ করা হচ্ছে তার জন্ম দেয়া সন্তানের সংখ্যা হয়ত আরও বেশি হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর