সমালোচনার বিষয়ে মুখ খুললেন আহমেদ শরীফ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি অভিনেতা আহমেদ শরীফকে গত ১৮ এপ্রিল ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই শিল্পী ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এই অনুদান দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিনেতার অনুদান গ্রহণ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই অভিযোগ তুলে বলেন, তিনি দুস্থ বা গুরুতর অসুস্থ শিল্পী নন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই অভিনেতা।

বিষয়গুলো নিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমের সাথে এবার সরাসরি কথা বললেন আহমেদ শরীফ। অভিযোগগুলো অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ নানা অসুখে ভুগছি। কিছুদিন আগে পিত্তথলীতে পাথর ধরা পড়ায় অস্ত্রোপচারও করেছি। বার্ধক্যজনিত কারণে আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার বয়স এখন ৭৪ বছর। এই বয়সে একজন মানুষ কতটুকুই সুস্থ থাকে। ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারি না। অনেক আগে শুটিং করতে গিয়ে পড়ে পা ভেঙে গিয়েছিল। সে সময় অস্ত্রোপচার করে পায়ে রড বসানো হয়েছে। ১৮ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি।’

নিজের পরিবার প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্ত্রীর চোখের রেটিনায় সমস্যা। চিকিৎসার অভাবে তার চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক মেয়ে আফিয়া মোবাসসিরা মৌরি ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে তার।

তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের বাইরে আমি আর কোনও পেশায় জড়িত ছিলাম না, এখনও নেই। যারা বলছেন আমি হাউজিং ব্যবসা করি, তাদের উদ্দেশে বলবো, তারা প্রমাণ করুক। আমি ৪৮টি বছর দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, তাদের বিনোদন দিয়েছি। ২০ বছর ধরে ভাড়া বাসায় থাকি। আমার পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁই এটাই।’

এদিকে আরও একটি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে। ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুদানের চেক নিয়ে ওই দিন রাতেই চলচ্চিত্র প্রযোজক শফি বিক্রমপুরীর ৫০তম বিয়েবার্ষিকীর আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দেন আহমেদ শরীফ। ওই অনুষ্ঠানে তাকে বেশ স্বাভাবিক লাগছিল বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

বিষয়টি নিয়ে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘চলচ্চিত্র প্রযোজক শফি বিক্রমপুরীর অনেক ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। তিনি আমার পারিবারিক বন্ধু। তাদের বিয়েবার্ষিকী অনুষ্ঠানে গিয়েছি এটা সত্য। কিন্তু আনন্দ-আড্ডায় তো আর মাতিনি। সেখানেও কিছুটা অসুস্থবোধ করছিলাম। তাই দ্রুত বাসায় ফিরেছি।’
রাজনৈতিক মতাদর্শের কথাও তুলে ধরেন এই অভিনেতা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বা ইতিহাস বিকৃতির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের দিন আমিও উপস্থিত ছিলাম। তখন ছাত্রাবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে বসে আমিও সেই ভাষণ শুনেছি। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে আমরা নিশ্চিত ছিলাম এবার আমরা স্বাধীন হবো। বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই দেশ কোনোভাবেই স্বাধীন হতো না। তার নেতৃত্ব না থাকলে, দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেত না।’

প্রসঙ্গত, আহমেদ শরীফ আট শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন । খলনায়ক হিসেবে সফল হলেও অনেক চলচ্চিত্রে ভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্য রয়েছে অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, দেনমোহর (১৯৯৬), তিন কন্যা (১৯৮৫) ও বন্দুক।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি আহমেদ শরীফ টেলিভিশনের জন্য কিছু নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন। ২০০১ সালে প্রথম নির্মাণ করেন টেলিফিল্ম ‘ক্ষণিক বসন্ত’। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য তিনি নির্মাণ করেন নাটক ‘ফুল ফুটে ফুল ঝরে’। বড় পর্দায় এখন কম দেখা গেলেও ছোট পর্দায় বিভিন্ন নাটকে মাঝে মধ্যেই দেখা মেলে তার।

তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর। আর মুক্তি অপেক্ষায় আছে শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ‘শাহেনশাহ’ ছবিটি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর