শ্রীলংকায় ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত কতটা শক্তিশালী ?

জামাত আল তাওহিদ আল ওয়াতানিয়া শ্রীলংকায় ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতেরই (এনটিজে) একটি অঙ্গ-সংগঠন। স্থানীয়ভাবেই তেমন একটা পরিচিত নয় এনটিজে।

বিবিসি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে গতকাল। শ্রীলংকার কর্মকর্তারা বলছেন, এরা স্বল্পপরিচিত নতুন একটি গোষ্ঠী, যাদের সম্পর্কে কিছুদিন আগেও তেমন একটা জানা ছিল না। কিছুদিন আগে একটি বুদ্ধ ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনার সঙ্গে এই গ্রুপটি জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হয়। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৬ সালে গোষ্ঠীটির সেক্রেটারি আবদুল রাজিককে গ্রেপ্তারের পর প্রথম এটি আলোচনায় আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী ধ্যান-ধারণা লালন করে। শ্রীলংকার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, এই গ্রুপটি কাট্টাকুডি নামের একটি মুসলিম অধ্যুষিত শহরে ২০১৪ সালে গঠিত হয়। তবে এর আগে মারাত্মক কোনো হামলা চালানোর সঙ্গে এদের নাম শোনা যায়নি। তবে এরা ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) সমর্থন করে বলে জানা যাচ্ছে।

অ্যালান কিনান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলংকাবিষয়ক পরিচালক। তার ধারণা, ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত সম্ভবত সেই গোষ্ঠী, যারা গত বছরের একটি ‘ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ’ ঘটনায় জড়িত ছিল। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ডিসেম্বরে মারওয়ানেলা শহরে বুদ্ধের কয়েকটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল এবং এর পর পুলিশ এমন কয়েক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছিল, যারা একজন ধর্মপ্রচারকারীর ছাত্র ছিলেন বলে বলা হয়েছে। এই ধর্মপ্রচারকারীর নাম যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, তা গতকালই বেরিয়েছে।’

১০ দিন আগে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের দ্বারা চার্চে হামলার ব্যাপারে ‘বন্ধুপ্রতিম একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা’ শ্রীলংকার পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছিল বলে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিচ্ছে। ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মনোযোগ এখন ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের দিকেই বেশি পড়েছে।

বিপ্লব নয়, বিভেদ তৈরিই লক্ষ্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজমের পরিচালক অ্যানি স্পেকহার্ড বলেছেন, এনটিজের উদ্দেশ্য কোনো বিপ্লব করা নয়, তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জিহাদিদের আন্দোলনকে শ্রীলংকায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমাজে ঘৃণা, ভয় ও বিভেদ তৈরি করা।

তিনি আরও বলেন, রবিবার একসঙ্গে গির্জা ও বিদেশি পর্যটক অধ্যুষিত হোটেলে হামলা চালানো হয়েছে, যার সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বড় বড় ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হামলার মিল রয়েছে। আইএসের শাখা এনটিজে?

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রোহান গুনারতœা বলেছেন, আইএসের শ্রীলংকার শাখা হচ্ছে ওই ছোট সংগঠনটি, যারা চরমপন্থিদের হয়ে লড়াই করতে সিরিয়া আর ইরাকেও গিয়েছিল।

শ্রীলংকার কেবিনেট সেক্রেটারি রাজিথা সেনারতেœ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দেশের ভেতরে থাকা একদল ব্যক্তি এসব হামলা করেছেÑ এটা আমরা বিশ্বাস করি না। এখানে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক আছে, যাদের ছাড়া এ হামলা সফল হতো না।’

অ্যান্টিটেরোরিজম বিশেষজ্ঞ আলটো লাবেটুবানও বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে মেলালে দেখা যায়, আইএস ও আল কায়দার সঙ্গে এসব হামলার মিল রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে মাত্রায় হামলাটি করা হয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না যে শুধু স্থানীয়রা এটি ঘটিয়েছে। সম্ভবত বিদেশি গোষ্ঠী বা লোকজন এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে, বিশেষ করে ভারত বা পাকিস্তান থেকে লোকজন আসতে পারে।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর