শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ

আজ স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশের জন্মদিন। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় নাম পাকিস্তান থেকে ‘বাংলাদেশ’ করা হয়।

সাথে সাথে জন্ম হয় স্বাধীন একটা দেশের। এরপর থেকে চলে দেশ থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম।

মূলত এই স্বাধীন দেশের সূর্য ডুবে যায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে। ২০০ বছরের ইংরেজ শোষণ ও অত্যাচারের জিঞ্জির ছিড়ে বের হতে লড়াই করেছেন অসংখ্য বীর যোদ্ধারা। তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহ, মজনু শাহ, ক্ষুদিরাম, বাঘা যথীন, সূর্যসেনদের মত বঙ্গ সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছেন দেশের তরে।

সংগ্রামের মুখে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা উপমহাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের। মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গঠন করা হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ পরে পাকিস্তানের পূর্ব অংশে। নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’।

ইংরেজদের জিঞ্জির থেকে বের হতে পারলেও বাংলাদেশের মানুষ আবার বন্দি হয়ে যায় পাকিস্তানীদের শোষনের জালে। প্রথম ধাক্কাটা আসে ভাষা নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় ‘উর্দু’র জুলুম। কিন্তু আজন্ম সংগ্রামী বাঙালি তা মানেনি। সালাম, রফিকেরা প্রাণ দিল ভাষার জন্য। প্রতিষ্ঠা পেল বাংলা। ভাষার জন্য সারা দুনিয়ায় একমাত্র প্রাণ দেয়া জাতি আমরাই।

এর পরের দিনগুলো শুধুই আগুনের। একের পর এক আন্দোলন করতে করতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষগুলো যেন লোহা পুড়ে ইস্পাতে পরিণত হলো। নেতা হিসাবে অএল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মাওলানা ভাসানীর মত কিংবদন্তীকে। ৬২,৬৬ আর ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের পর এলো ৭০ এর নির্বাচন।

এই নির্বাচনে বাংলার মানুষের অধিকারের পক্ষে লড়াই করা ‘নৌকা। প্রতীক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করলেও দেয়া হয়নি ক্ষ্মতা বুঝিয়ে। টালবাহানা শুরু করে ভুট্টোরা।

এসে গেল ১৯৭১। বছরটাই যেন আগুনের বছর। আর মার্চ মাসতো সেই আগুনে কেরোসিন ঢালার মতন অবস্থায় তখন। ৩রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করা হলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। অঘোষিত স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামী মানুষের তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ডাক দিলেন দেশের মানুষকে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ময়দানে বিশাল বড় এক জনসভা। লোকে লোকারণ্য সেই জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ১৭ মিনিট যেন কবিতা আবৃত্তি করলেন এক মহান কবি।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ বলে গলা উচিয়ে বলা সেই লাইনটায় বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা একমত দেয়া হয়ে গিয়েছিল। এরপরে কাটে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের সময়। চলে বঙ্গবন্ধুর সাথে পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক বৈঠক। ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়ার নামে একের পর এক প্রহসন করতে করতে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনে তারা।

২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দেশের প্রধান শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযান শুরু করার পূর্বে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার করা হয় বাংলার মানুষের নেতা ‘শেখ সাহেব’ কে। গ্রেপ্তার হওয়ার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত ততকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।

পরে ২৭শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপর থেকে শুরু হয় বাংলার মুক্তি সংগ্রামের চুড়ান্ত আন্দোলন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি শেষে বাংলার দামাল ছেলেরা নামে যুদ্ধে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা ১৬ ডিসেম্বর পাই চুড়ান্ত বিজয়।

অনেকেই ১৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশের জন্মদিন বলে দাবী করেলেও তা ভূল। যেদিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয় সেদিনই জন্ম হয় বাংলাদেশের। বাকি ৯টা মাস লেগেছে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রু মুক্ত করতে।

 

বারতাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর