‘প্রবাসীদের টাকা আমি খাইনা’

প্রবাসীদেরকে বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে মানতে নারাজ। তাদের কথা হল আমার পরিবারে কেউ প্রবাসে থাকেও না, আমি কোন প্রবাসীর টাকা খাইওনা। আমি দেশে ব্যবসা করে খাই, চাকরি করে খাই।

তাহলে প্রবাসীদের টাকা কি শুধু নিজেদের পরিবারের জন্যই?

তাহলে এইবার জেনে নিন প্রবাসীদের টাকা কারা খাচ্ছে- বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স এর উপর চলে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা। কখনো কখনো রেমিট্যান্স কম আসলে দেউলিয়া হয়ে যায় ব্যাংকগুলি। গ্রাহকদের টাকা দিতে পারে না। গ্রাহকরা টাকা না পেলে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারে না। মাল অর্ডার করতে পারে না। থমকে যায় সকল ব্যবসা বাণিজ্য। গ্রাহকের ভীড় কমে যায় ব্যাংকে। ব্যাংকে ভীড় কমে গেলে ব্যাংকগুলির কর্মচারীদের কাজ কমে যায়।

মাস শেষে তাদেরকে বেতন দিতে হিমসিম খায় ব্যাংকগুলি। রেমিট্যান্স না আসলে প্রথম ধাক্কাটা এখান থেকেই শুরু হয়।

বাংলাদেশের এক কোটি প্রবাসী রয়েছে। প্রতিটা প্রবাসীর টাকায় তার স্ত্রী- সন্তান-বাবা-মা গড়ে ৫ জনের দায়িত্ব নিলে এই এক কোটির উপর ৫ কোটি মানুষ চলে বিনা শ্রমে। ৫ কোটি জনসংখ্যা একেবারে কিছু না করেই খাচ্ছে প্রবাসীদের টাকার উপর। তাহলে বাকি থাকে আর ১৪ কোটি।

এইবার প্রতিটা প্রবাসীর পরিবার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে। কাপড় কিনছে। ঔষুধ কিনছে। গাড়িতে চড়ছে। তাদের ছেলেমেয়ে স্কুল/কলেজে পড়ছে। এখন আপনি যদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করেন দ্রব্যগুলি যার কাছে বিক্রি করছেন তার টাকাটা কোথথেকে আসে? সেই টাকা থেকে কি আপনার পরিবার চালাচ্ছেন না?

আপনি যদি গাড়ির চালক হোন, বা গাড়ির মালিক হোন আপনার গাড়িতে যে প্রবাসীর ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করছে
সে টাকাটা কোত্থেকে দিচ্ছে আপনাদের?আপনি যদি ডাক্তার হোন কিংবা ঔষুধ বিক্রেতা হোন,এই যে প্রবাসীদের পরিবারের ৫ কোটি মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছেন সে টাকাগুলি তারা কোথথেকে দিচ্ছে? আপনি যদি স্কুল/কলেজের শিক্ষক হোন; এই যে প্রবাসীদের ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন তারা আপনাকে টাকাগুলি কোথথেকে এনে দিচ্ছে? এইভাবেই প্রবাসীদের ৫ কোটি পরিবারের সাথে যারায় জড়িত তারা সবাই প্রবাসীদের টাকা কি খাচ্ছেন না?

এখন বলতে পারেন আপনারাও শ্রমের বিনিময়ে টাকা নিচ্ছেন। হ্যাঁ এটা ঠিক কিন্তু এখানে মূল বিষয়টা শ্রমের নয়, আর্থিক যোগানদাতার। আপনি যতই শ্রম দেন না কেন; আপনি টাকা আয় করছেন দেশ থেকে। এতে আপনার লাভ হলেও দেশের কোন লাভ হচ্ছে না।
কিন্তু প্রবাসীরা দেশের বাইরের থেকে টাকা আয় করে সেটা বাংলাদেশে ঢুকাচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি বিল্ডিং রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৮০ লাখ বিল্ডিং প্রবাসীদের। মানে অনেকেই দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিল, প্রবাসের টাকায় দেশে বাড়ি করেছে। তাহলে এই বিল্ডিংগুলো বানাতে যারা শ্রম দিয়েছে তারা কি প্রবাসীদের টাকা খায়নি?

বাংলাদেশের প্রতিটা ধর্মীয় উপসনালয়ে অনুদানের ৮০ ভাগ টাকা প্রবাসীদের। তাহলে এ উপসনালয়গুলি কি আপনি ব্যবহার করছেন না? প্রত্যেকটা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডোনেশনের মোটা অংকটা প্রবাস থেকেই যায়। তাহলে সেখানে কি আপনার সন্তান সে
টাকা খাচ্ছে না? এই যে আজ হুজুররাও এক লাখ টাকা দুই লাখ টাকা নিয়ে মাহফিলে প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলে। অথচ প্রতিটা মাহফিলে টাকার জোগান আসে প্রবাসীদের থেকেই। তাহলে হুজুররা কার টাকায় কারে চড়ছে?

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আজ যদি এই এক কোটি প্রবাসী প্রবাসে না গিয়ে দেশে থাকত তাহলে তারা দেশে ব্যবসা/চাকরি করত। একটিবার ভাবুনতো এখন দেশে চাকরি নেই, ব্যবসা নেই। লাখ লাখ যুবক বেকার। সেখানে এই এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান কোথথেকে হতো? এই এক কোটির উপর নির্ভর করে খাওয়া তাদের পরিবারের ৫ কোটি মানুষ কি করে খেত? তাহলে তারা যে আপনাদেরকে সাইড দিয়ে নিজেরা বিদেশে চলে গেছে সে সুবিধাটা কি আপনি নিচ্ছেন না?

এগুলি ছাড়াও আরো অনেক কিছু লেখার ছিল।

বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের রক্তে প্রবাসীদের শ্রমের টাকা মিশে আছে। সরকারি চাকরি যারা করে তাদের ছেলেমেয়েরা ত প্রবাসীদের টাকায় বড় হচ্ছে।

এরপরও বলেন ‘আমি প্রবাসীর টাকা খাইনা’?

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর