অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।। চৌহাট ইউনিয়ন, ধামরাই

তথ্য অধিকার আইনে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আজকের প্রতিবেদন ধামরাই উপজেলার ১নং চৌহাট ইউনিয়নে ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থ বছরে সরকারী বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে।

২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) সাধারণ কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট দুইটি প্রকল্পে হিসেবে মোট ১০.০৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরকারী বরাদ্দ আসে। প্রকল্প দুইটি হলো- দ্বিমুখা মসজিদের সামনের রাস্তা মেরামত ও সন্ধিতারা কাওছারের বাড়ির রাস্তা মেরামত (বরাদ্দ ৩.৮০ মেঃ টন) এবং চৌহাট রাজাপুর মহসিন খান ডাবলু মেম্বারের বাড়ি হতে ব্রিটিশদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন (৬.২৪০ মেঃ টন)।

সরেজমিন দেখা যায়, ১ম প্রকল্পটির কাজ কোনোভাবে সম্পন্ন হলেও দ্বিতীয় প্রকল্পটির কাজ বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য দিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পটির তত্বাবধায়নকারী ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ মহসিন খান (ডাবলু)। তার তত্বাবধায়নে সম্পন্ন রাস্তাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশ বর্ষাকালে রক্ষার জন্য অতিরিক্ত বালির বস্তা দিয়ে করা হয়েছে। এজন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্যের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে রাস্তার উন্নয়নে যা তিনি নিজের থেকেই করেছেন বলে জানালেন।

এই প্রতিবেদকের নিকট তিনি বলেন, মূলত আমি নিজেকে স্বচ্ছ রাখতে চাই এবং প্রকল্পটি আমার নিজের এলাকায় এজন্য রাস্তার কাজটিতে সরকারি বরাদ্দের বাইরেও নিজের থেকে দিয়ে করেছি।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক ১ম পর্যায়ে মাত্র একটি প্রকল্পে ৮ মে. টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ আসে। প্রকল্পটি হলো চর চৌহাট আবুলের বাড়ি হতে মিনহাজের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। সরেজমিন গিয়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজটির মান সন্তোষজনক নয় দেখা গেছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) সাধারণ কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ৭টি প্রতিষ্ঠানে মোট ৩,১২,৪৯৭ টাকা (তিন লক্ষ বারো হাজার চারশত সাতা নব্বই টাকা) সরকারী বরাদ্দ আসে। এই সাতটি প্রতিষ্ঠান এবং তাদের বরাদ্দের পরিমান হলো- চর চৌহাট জাগরণী সংঘ উন্নয়ন (৫০,০০০/-), দক্ষিণ চৌহাট কবরস্তান উন্নয়ন (৫০,০০০/-), পাড়াগ্রাম গরীবে নেওয়াজ জামে মসজিদের ওজুখানা নির্মাণ (৪৩,২৭১/-), বাংগা বাড়ি ঈদগাহ মাঠ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), চৌহাট বাজারের মাদ্রাসা ও মসজিদ উন্নয়ন (৮৬,৫৪২/-), চৌহাট দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসা উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), চৌহাট উত্তরপাড়া নব তরঙ্গ যুব সংঘ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-) এবং চৌহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-)। সরেজমিন প্রতিষ্ঠানগুলিতে গিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ দেখা হয়।

২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট তিনটি প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ আসে। প্রকল্প তিনটির ভিতরে চৌহাট পালপাড়া পরেশের বাড়ি হতে কালী মন্দির পর্যন্ত রাস্তা নির্মান (সরকারী বরাদ্দ ২,৪০,০০০ টাকা) কাজটি প্রকল্প এলাকার জায়গার মালিকেরা রাস্তার জন্য জায়গা না ছাড়তে চাওয়ায় এখানে এ প্রকল্পটি অন্যত্র সম্পন্ন করা হয়। এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে চৌহাট ব্রিজ থেকে চৌহাট বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়।

তবে সরেজমিন দেখা যায়, বাজারের যে অংশ থেকে রাস্তা শুরু হয়েছে, তার একটু সামনে গিয়েই ব্রিজের দিকে যেতে রাস্তার মাঝে খাদ তৈরী হয়েছে। এখান দিয়ে রাস্তার অপর পাশে বয়ে যাওয়া বংশী নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাবার জন্য ট্রাক চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার মাঝ দিয়ে কেটে নিচু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাটির ব্যবসায়ী।

এব্যাপারে এই প্রকল্পের তত্বাবধায়ক চৌহাট ইউনিয়নের ৮নং ইউপি মেম্বার তোতা মিয়া বলেন, নদীর পাড়ের জায়গা যার তিনি এখান থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যেতেই আমাদের করা রাস্তার এভাবে ক্ষতি করেছেন।

প্রসঙ্গত, নদীর পাড়ের সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত জায়গা সরকারের, সেখান থেকে মাটি কেটে নেয়া সম্পূর্ণ আইনত দন্ডনীয়। এরপরও একটি প্রভাবশালী মহল চৌহাট ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশী নদীর একেবারে পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই মাটি পরিবহনের সুবিধার্থে সরকারী বরাদ্দে নির্মিত রাস্তার মাঝ দিয়ে কেটে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিষয়টি নিয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালামের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ থাকায় এ বিষয়টি তাকে অবগত করা যায়নি। তবে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলামকে জানানো হলে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের দ্বিতীয় বরাদ্দ আসে মকিমপুর খেয়াঘাট হতে ধুলজুরী রাস্তা মেরামত। এখানে মোট ৫,৬০,০০০ টাকা সরকারী বরাদ্দ আসে। চৌহাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলামের তত্বাবধায়নে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়। সরেজমিন প্রকল্প স্থানে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এবং সম্পূর্ণ প্রকল্পটি পরিদর্শন করলে বিধি অনুযায়ী ৪০ দিনে হত দরিদ্র শ্রমিক দিয়েই কাজটি করা হয়েছে জানা যায়।

অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের শেষ এবং তৃতীয় প্রকল্পটি হলো ছোট ভাকুলিয়া মাঝিপাড়া হয়ে দক্ষিণপাড়া তোতার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। এর জন্য সরকারী বরাদ্দ আসে ৪,১৬,০০০ টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পটি ৫নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মোঃ আব্দুল করিম টিপুর তত্বাবধায়নে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। হতদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে এ বিষয়টি প্রকল্প এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এছাড়াও রাস্তার দু’পাশে যেখান থেকে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে, সেখানের চিত্র দেখে ভেকু (খনন যন্ত্র) ব্যবহার করা হয় নাই বুঝা গেছে।

তবে চৌহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পাওয়া যায় নাই। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান নিয়মিত পরিষদে বসেন না এবং গত দুই মাসেও তাকে পাওয়া যায় নাই এই পরিষদে।

বিষয়টি জানতে চেয়ে ১নং চৌহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতির মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি সপ্তাহে দুই দিন পরিষদে বসেন। বাকী সময় চৌহাট বাজারে তার নিজের অফিসে বসেন।

উল্লেখ্য, কাবিখা সহ অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি চৌহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর