আজ বিশ্ব ঘুম দিবস, ভালোবাসার মানুষকে ঘুমোতে দিন

ঘুম ভালো হলে দুর্ঘটনার প্রবণতাও কমে। এক সমীক্ষায় জানা যায়, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর থেকেও মারাত্মক দুর্ঘটনা বেশি হয় ক্লান্ত থাকার জন্য। এক রাত না ঘুমোলেই গাড়ি চালানোর সময় আপনার মনে হবে, মদ্যপান করেছেন।

সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম যে কতটা জরুরি, সে ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতেই ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুক্রবার ঘুম দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ বছরে সেটি পড়েছে ১৩ মার্চ।

চরম ব্যস্ততার যুগে ঘুম মাথায় উঠেছে বর্তমান প্রজন্মের। যার থেকে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। সুস্থতার সঙ্গে ঠিক কী সম্পর্ক রয়েছে ঘুমের, বয়স অনুযায়ী কি ঘুমের পরিমাণ ও পদ্ধতি আলাদা হয়? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

পর্যাপ্ত ঘুমই দিবে আপনার সুস্থ জীবন

১. শুধু চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল মুছতে বা মন ভালো রাখতেই যে ঘুমের প্রয়োজন তা নয়। পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ রাখে আপনার হৃত্‍‌পিণ্ড, নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন।

২. ঘুমোলে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়বে। ডাক্তাররাই বলছেন, ভালো করে ঘুমোন, আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।

৩. অতিরিক্ত অথবা খুব কম ঘুমোলে তার প্রভাব পড়বে আপনার আয়ুষ্কালের উপর। ২০১০-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০-৭৯ বছর বয়সে মৃত মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে কম বা বেশি ঘুমনোর জন্য। তাই ডাক্তারদের পরামর্শ পর্যাপ্ত ঘুমোন, ভালোভাবে বাঁচুন।

৪. হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, অকাল বার্ধক্যের থেকে শরীরে জ্বলুনি অনুভূতি হয়। ২০১০-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের শরীরে বেশি পরিমাণে দেখা দেয় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

৫. ঘুমোলে বাড়বে সৃজনশীলতা। হার্ভার্ড ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ঘুমানোর সময় স্মৃতি ও নানা কাল্পনিক বিষয় মাথায় ঘোরাফেরা করে। এজন্য ভালো ঘুম হলে তা সৃষ্টির কাজে বিশেষ সহায়ক হয়। বিশেষত ছবি আঁকার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ প্রযোজ্য।

৬. আপনি যদি কোনও খেলোয়াড় হন, তবে আপনার সাফল্যের অন্যতম অস্ত্র নিঃসন্দেহে ঘুম। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলেজের ফুটবল খেলোয়াড়রা, যাঁরা রাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমান, ৬-৮ সপ্তাহ পর তাঁদের স্ট্যামিনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূরে চলে যায় যাবতীয় ক্লান্তি।

৭. গবেষণা বলছে, কলেজে যেসব ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করেন, তাঁরা অন্যদের থেকে বেশি ঘুমোন। যাঁরা কম ঘুমোন, তাঁদের ফলাফল হয় খারাপের দিকে।

৮. ঘুম কম হলে শিশুরা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৭-৮ বছরের শিশুরা রাতে ৮ ঘণ্টার কম ঘুমোলে বদরাগী ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে।

৯. পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে স্বাস্থ্যকর ওজন পান। আপনি যদি সুস্বাস্থের জন্য ডায়েট চার্ট মেন্টেন করেন, তবে ঘুমনোর ব্যাপারটিও মাথায় রাখুন। গবেষণা বলছে, ডায়েটের পাশাপাশি যাঁরা যথোপযুক্ত ঘুমোন তাঁদের ওজন অন্যদের থেকে ৫৬% বেশি কমে।

১০. স্ট্রেস কমাতে বিশেষ সহযোগী ঘুম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ঘুমের জুড়ি মেলা ভার।

১১. পর্যাপ্ত ঘুমোলে হতাশা কমে। ঘুমে ঘাটতি থেকে আসে হতাশা ও উদ্বেগ।

যেখানেই ঘুম পায় সেখানেই না ঘুমিয়ে নিরাপদে ঘুমান

গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভারতে প্রায় ১৩.৭ শতাংশ মানুষ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগেন। শ্বাস নেওয়ার সমস্যা, হাইপারটেনশনের ফলেই মূলত স্লিপ অ্যাপনিয়া হয় যা আপনার হার্টের অসুখও ঘটাতে পারে। এর ফলে স্ট্রোক, ডায়াবিটিস হয়। শিশুদেরও এই রোগের প্রবণতা রয়েছে। সোমোস স্লিপ ক্লিনিক, অরেঞ্জ স্লিপ অ্যাপনিয়া ক্লিনিক এবং আর এন টেগোর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ভালো ঘুমের জন্য টিপস দিয়েছেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমের বিশেষজ্ঞ-টিপস

১. একটা নির্দিষ্ট সময় তৈরি করুন ঘুমতে যাওয়ার ও ওঠার।

২. দিনে ঘুমনোর অভ্যেস থাকলে তা ৪৫ মিনিটের বেশি যেন না হয়।

৩. ঘুমের অন্তত ৪ ঘণ্টা আগেই মদ্যপান শেষ করুন। ঘুমনোর আগে কিছুতেই ধূমপান করবেন না।

৪. ঘুমনোর আগে ব্যায়াম করবেন না। অত্যধিক মশলাদার খাবার খেয়েই ঘুমোতে যাবেন না।

৫. আরামদায়ক বিছানায় ঘুমোন।

শিশুদের জন্য ঘুমের বিশেষজ্ঞ-টিপস

১. রাতে প্রতিদিন একই সময় ঘুমোতে যেতে হবে। রাত ৯ টা হলে সবচেয়ে ভালো।

২. দিনে মাঝে মাঝে অল্প বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যেস তৈরি করতে হবে।

৩. শিশুর ঘুমনোর জায়গাটি প্রস্তুত করতে হবে। অন্ধকার, ঠিকঠাক তাপমাত্রা এবং পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

৪. শিশুকে একা ঘুমনোর অভ্যেস এবং একা একা ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যেস করান।

৫. ঘুমনোর আগে কোনও ভাবেই ফোন, কম্পিউটার গেম, টিভি দেখা যাবে না। অন্তত ২ ঘণ্টা আগেই বন্ধ করতে হবে।

বার্তাবাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর