সিরাজগঞ্জে বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের বিরুদ্ধে বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে অভিযোগকারী এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার তালম ইউনিয়নে। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,ওই ইউনিয়নের চকদেবীরামপুর গ্রামের মৃত হবিবুর রহমানের স্ত্রী মাজেদা খাতুনের উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিস্থাপন স্বাপেক্ষে বিধবা ভাতার জন্য মনোনীত হন । যার বই নম্বর ১৯১/১, হিসাব নম্বর ৪২১৭৬০১০০৯৩৪১১।

অভিযোগকারী মাজেদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪ মার্চ তালম ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য হাসিনা বেগম তার নামে প্রথম বারের মত বিধবা ভাতার টাকা ব্যাংকে এসেছে এবং তা তুলতে হবে একথা বলে তাকে বাড়ি থেকে তাড়াশে নিয়ে আসেন ।

পরে কৌশলে বিধবা মাজেদাকে তাড়াশ সোনালী ব্যাংকের নিচে বসিয়ে রেখে টিপসই নিয়ে ইউপি সদস্য নিজেই ১৮ হাজার ৩শ’টাকা উত্তোলন করেন। ইউপি সদস্য হাসিনা বেগম টাকা উত্তোলনের পর বিধবা মাজেদা কে মাত্র ২ হাজার টাকা হাতে দিয়ে এটাই তার প্রাপ্য ভাতা বলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে প্রতারিত ওই বিধবা অন্য কয়েকজন বিধবা ভাতা ভোগীদের কাছে জানতে পারেন তার প্রাপ্য ভাতার পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৩শ’ টাকা।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরের দিন সকালে মাজেদা তাড়াশ সোনালী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার নামে ১৮ হাজার ৩শ’ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পরে মাজেদা ওই ইউপি সদস্যকে জানালে সে বিধবা ভাতা প্রতিস্থাপন করতে খরচ হয়েছে বলে তাকে ফিরিয়ে দেন।

বিধবা মাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, স্বামী মারা যাবার পর থেকে বহুকষ্টে জীবন যাপন করছি। কয়েক বছর ঘুরে একটি কার্ড পাই। কার্ড দিয়ে টাকা তুলে ব্যাংক থেকে বের হওয়া মাত্র হাসিনা মেম্বর বই ও টাকা জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সমাজসেবা অফিসারের কিছু লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন ফল পাচ্ছি না।

একই ইউনিয়নের পান্ডুরা গ্রামের প্রতিবন্ধী তানিয়ার মা সোহাগী জানান,ব্যাংক থেকে প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য বরাদ্দ ১৪ হাজার ১ শত টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বের হওয়া মাত্র তালেব মেম্বর জোরপূর্বক টাকা নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি দিতে অস্বীকার করার পর জোরজুলুম করে ৬ হাজার আমাকে দিয়ে বাদবাকী ৮ হাজার ১শ টাকা নিয়ে নেয়।

তালম লস্করপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ মঞ্জুয়ারা ও হাড়িসোনা গ্রামের খাদেম আলী জানান, আমরা গরীব। বৃদ্ধ বয়সে একটু ভালভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য সরকার আমাদের ভাতা দেয়। কিন্তু সেই টাকা চেয়ারম্যান-মেম্বর নিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, গরীবের টাকা গরীব খাবে নাকি চেয়ারম্যান-মেম্বররা খাবে-এটা সরকারের কর্মকর্তা ন্যায্যভাবে দেখবেন, তাদের উপর বিচারের ভার দিলাম।

তালম পদ্মাপাড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ নারী জমিনা খাতুন বলেন, কার্ড করতে চেয়ারম্যান আব্বাস উজ্জামান আব্বাস তিন হাজার টাকা নেন। দেড় বছর পর কার্ড পাই। ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার তুলে বের হওয়া মাত্র তালেব মেম্বর চার হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ৫শত টাকা দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে তালম ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নাজির উদ্দিন,আশরাফুল ইসলাম ও আবু তাহের জানান,বয়স্ক,প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা ব্যাংকে আসার পরই চেয়ারম্যান আব্বাস উজ্জামান আববাস সকল ইউপি সদস্যের ডেকে মিটিং ডাকেন। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংকে যাবার পর কার্ডধারীদের হাতে কার্ড দেয়া হবে।

আর ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর তাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বাদ বাকী টাকা ইউনিয়ন পরিষদে এসে কাছে জমা দিতে হবে। পরে সেগুলো বাগ ভাটোয়ারা করে নেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউপি মেম্বর তালেব,হাসিনা ও আজিজুলকে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা জোরপূর্বক নিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের হাতে দেয়। পরে চেয়ারম্যান ও কয়েকজন মেম্বর টাকাগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

অপরদিকে চেয়ারম্যান আববাস উজ্জামান আববাস,ইউপি সদস্য তালেব হাসিনা ও আজিজুল ইসলাম টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান,প্রতিপক্ষরা তাদের ফাঁসাতে এ ষড়যন্ত্র করেছে।

তবে এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান বলছেন,লিখিত অভিযোগ পাবার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহাদৎ হোসেন জানান,চেয়ারম্যান-মেম্বররা আমাদের অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেয়-এটা সত্য। কিন্তু আমরা এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। তাছাড়া অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে প্রমান হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর