রাতে এসে রাতেই খুন, ভোরের লঞ্চে ভোলায়

চোর দেখে চিৎকার করায় খুন হন বরিশাল নগরীর কাশিপুরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মারুফা বেগম (৪১)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতারকৃত মো. মহসিন শেখ (৩২)। নিহত মারুফা বেগম নগরীর কাশিপুর গণপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী এবং কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। বর্তমানে তার স্বামী জহিরুল হায়দায় চৌধুরী ঢাকায় প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডে কর্মরত। চাকরির সুবাদে নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা সুলতান আহমেদের মালিকানাধীন ‘শরীফ মঞ্জিলের’ তিনতলায় ভাড়া থাকতেন মারুফা বেগম।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মারুফা বেগমের ফ্ল্যাটে চুরি করতে যান মহসিন শেখ। এ সময় চোর বলে চিৎকার করলে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারুফা বেগমকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পালিয়ে যান মহসিন শেখ। গ্রেফতারকৃত মহসিন শেখ পিরোজপুরের খানাকুনিয়ারী এলাকার মোস্তাফা শেখের ছেলে। তিনি একজন পেশাদার চোর।

বুধবার দুপুর ১২টায় নগরীর কাশিপুর বিমানবন্দর থানা কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আ. হালিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দর থানা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রহমান মুকুল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ আলম মুন্সী ও এসআই হাসান বশির প্রমুখ। পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে মারুফা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১২ বছর আগে জহিরুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে মারুফার বিয়ে হয়। নিঃসন্তান ছিলেন এই দম্পতি। পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা মারুফার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি-না এ ধরনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে পুলিশ। মারুফার ভাই মো. জামাল উদ্দিন মন্ডল বাদী এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় এসআই ফিরোজ আলম মুন্সীকে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ঘটনা উদঘাটনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় পুলিশ।

এসআই ফিরোজ আলম মুন্সী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন আলামত দেখে ওই ফ্ল্যাটে চোর ঢুকেছিল বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়। পরে জানা যায় সেই দিন পাশের এক বাড়িতে চুরি হয়েছে। সেখান থেকে অন্য মালামালের সঙ্গে দুটি মোবাইল নিয়ে যায় চোর। চুরি হওয়া মোবাইল দুটি চালু ছিল। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল দুটি কোথায় ব্যবহার হচ্ছে তা বের করা হয়। ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে ফোন দুটি ব্যবহারকারী মো. মহসিন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, তিনি একজন পেশাদার চোর। ভোলায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ঘটনার আগেরদিন ভোলা থেকে বরিশাল এসে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন।

মহসিন শেখের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ আলম বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১টার দিকে মারুফার পাশের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে শাবল নিয়ে অবস্থান নেন মহসিন। সেই ছাদ থেকে চুরি করার উদ্দেশ্যে মারুফার ফ্ল্যাটের বেলকনিতে প্রবেশ করেন। বেলকনির দরজা খোলা থাকায় মারুফার বিছানার পাশে শাবল রেখে চেয়ারের ওপরে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে পাশের বাসার ছাদে চলে যান। ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে ৩০ টাকা পেয়ে পুনরায় মারুফার ঘরে ঢুকে আলমারি খোলেন মহসিন। শব্দ পেয়ে মারুফা জেগে ওঠে চোর চোর চিৎকার করলে মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন মহসিন। মারুফার মাথা থেকে রক্ত বের হতে দেখে বেলকনি দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে পাশের বাসার ছাদে গিয়ে ফজরের আজান পর্যন্ত অবস্থান করেন। আজানের পর ওই ভবন থেকে বের হয়ে লঞ্চযোগে ভোলায় চলে যান মহসিন।

এসআই ফিরোজ আলম বলেন, শনিবার দুপুরে মহসিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মহসিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর