মুসলিম বন্দিকে লোহার শিক দিয়ে দেবতার নাম লেখার অভিযোগ

অভুক্ত অবস্থায় বিচারাধীন মুসলিম বন্দিকে বেধড়ক মারধর। তারপর গরম লোহার শিক দিয়ে তার পিঠে হিন্দু দেবতার নাম ‘ওম’ লিখে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির তিহার জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে ইতোমধ্যে কারকারডুমা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সাব্বির নামের ওই বন্দির পরিবার। তিহার জেলের পুলিশ কর্মকর্তা রাজেশ চৌহান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাব্বিরকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম বলছে, ৩৪ বছর বয়সী সাব্বিরকে শুক্রবার কারকারডুমা আদালতে হাজির করে পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু এই মুসলিম বন্দির পিঠের দাগ দেখে একপ্রকার শিউরে ওঠেন ম্যাজিস্ট্রেট রিচা পারিহার। দেখা যায়, সাব্বিরের পিঠের বাম দিকে প্রায় ছয় ইঞ্চি বড় ‘ওম’ চিহ্নটি খোদাই করা রয়েছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, যদি বলপূর্বক চিহ্নটি খোদাই করা হয়, তাহলে এত সুন্দরভাবে সেই কাজটি করা যেত না। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি রয়েছে সাব্বির। গত ১২ এপ্রিল জেল সুপার রাজেশ চৌহানের কাছে জ্বালানি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেন সাব্বির। তিনি বলেন, জেলের স্টোভটি নষ্ট হয়ে গেছে। এর একদিন নিজের ঘরে তাকে ডেকে পাঠান রাজেশ চৌহান এবং সেখানে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাব্বিরের উপর অকথ্য নির্যাতন চালান তিনি। দু’দিন সাব্বিরকে অভুক্ত অবস্থায় রেখে দেয়া হয়। তারপর গরম শিক দিয়ে সাব্বিরের পিঠে ‘ওম’ খোদাই করে দেন রাজেশ চৌহান ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। ‘তোদের মতো মুসলিমদের জন্য আমাদের দেশ ধ্বংস হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করার অভিযোগও উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি গত ১৪ এপ্রিল রাজেশ চৌহান সাব্বিরকে বলেন, যেহেতু সে নবরাত্রির সময়ে উপবাস করেছে, তাই মুসলিম থেকে হিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
১৭ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার পর, বিচারকের সামনে সব কথা খুলে বলেন সাব্বির। তার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পাশাপাশি অভিযুক্ত জেল সুপার রাজেশ চৌহান যাতে কোনোভাবে তার ওপর খবরদারি না চালাতে পারে তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশও দেয়া হয়।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ১৮ এপ্রিল তিহার জেল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিনিধি যেমন আসেনি তেমনই মেডিক্যাল পরীক্ষা বা তদন্তের রিপোর্টও জমা পড়েনি আদালতে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে তিহারের ডিজিপির কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন বিচারক। এ প্রসঙ্গে তিহারের ডিজি অজয় কাশ্যপ এক বিবৃতিতে বলেন, ডিআইজি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। ইতোমধ্যে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই বিচারাধীন বন্দিকে অন্য জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। সাব্বিরের আইনজীবী জগমোহন বলেন, জেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে কেন সাব্বিরকে টার্গেট করা হলো। জেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জবাব দেয়ার পরই আদালত রায় শোনাবে। এ ঘটনায় সাব্বিরের পরিবার আতঙ্কিত হলেও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ সাব্বিরকে গ্রেফতার করেছিল ভারতের পুলিশ। বর্তমানে অস্ত্র আইনে তার নামে মামলা চলছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর