হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ৮ম ব্যাচের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ রাফি ও রুম্মান হোসেন, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জিদান হোসেন এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের হাফিজুর রহমান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একটি সূত্র জানায়, বরিশাল জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শমীম মোল্লার ছেলে গনিত বিভাগের মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে রাজনীতি করে আসছিল বেশ কিছুদিন থেকে। তারই ছত্রছায়ায় নগর বিএনপি নেতার ছেলে নাভিদ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হলের সিট দখল নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হামলা। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই ক্যাম্পাসে হামলা পাল্টা হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে এই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবী করে ভিসি বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে এ ধরণের আক্রমণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং সঙ্কার কারণ। তাই অতিদ্রুত ক্যাম্পাসের নিরাপদ পরিবেশ ও প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে করে এহেন কর্মকান্ডে পুনর্বার সম্পৃক্ত না হয় সেই লক্ষ্যে সুষ্ঠূ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি (স্থায়ী বহিঃস্কার) নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, “এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শেরে বাংলা হলের এক শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শেরে বাংলা হলে ঘটে এ ঘটনা। নির্যাতিত শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ শাহজালাল। সে ফিণ্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
শাহ জালাল জানায়, ৪০১৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলো সে। এসময় জিওলজি এন্ড মাইনিং বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত শাহজালালের রুমে গিয়ে জরুরী কথা আছে বলে ১০০১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে রুমের মধ্যে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তার মুখ বেধে মারধর ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে শাহজালাল।
ওই রুমে তখন চারজন পরিচিত সহ কমপক্ষে ৮জন অপরিচিত একই বর্ষের লোক ছিলো। এদের হাতে ছিলো রড ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র। এরা শাহজালালের সামনেই তাকে কোথায় নিয়ে মারধর করবে সে বিষয়ে আলাপ করছিলো। সবার চোখ ফাকি দিয়ে দরজার সিটকানি দ্রুত খুলে দৌড়ে পালিয়ে ৪০১৪নম্বর রুমে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে ধাওয়া করে আনতে চায় অভিযুক্তরা। কিন্তু ওই রুমে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে অভিযুক্তরা ব্যর্থ হয়।
শাহজালাল জানায়, বিকেলে বঙ্গবন্ধু হলের বাংলা বিভাগের নাভিদ ও অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ সাইফের মধ্যে কক্ষ পরিবর্তন করা নিয়ে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় সাইফ গ্রুপের চারজন অাহত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরই জের ধরে সাইফের পক্ষের লোকজন শাহজালালের উপর নির্যাতন চালায়। এ ঘটনার বিচার দাবী করেছে শাহজালালের সহপাঠিরা।
অপরদিকে হলের প্রভোস্ট ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বুধবার দিনের বেলা এ বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বার্তাবাজার/এমকে